তখনো ঢাকায় থাকেন বুদ্ধদেব বসু। পুরানা পল্টনের বাড়িতে এক সদ্যযৌবনা প্রতিবেশিনীকে ভালোবেসে ফেলেছিলেন তিনি। সেটা প্রেম নয়। দূর থেকে রাস্তার এপারে-ওপারে চোখের দেখা, বিনা বাক্যালাপে কত কথাই না বলা! ‘কঙ্কাবতী’ বইয়ে এই সময়কার মাত্রাস্পর্শহীন প্রেমের বেদনার আভাস পাওয়া যাবে।
আর পাওয়া যাবে নাটকে। হ্যাঁ, সেই প্রেমের আবেশেই বুদ্ধদেব বসু লিখে ফেলেছিলেন নাটক ‘একটি মেয়ের জন্য’। প্রেমিকসহ মেয়েটি বাবার ঘর ছেড়ে এসেছে।বাবার প্রতি বিদ্রূপ ছিল সেই রচনায়। নায়ক-নায়িকার চুম্বনদৃশ্যও ছিল। গুরুজনদের পক্ষে এই নাটক পছন্দ করার কোনো কারণ নেই। কিন্তু তা পছন্দ হলো অধ্যাপক রমেশ মজুমদারের। তবে চুম্বনদৃশ্য বাদ দিয়ে অভিনয় হতে হবে। তিনি জগন্নাথ হলে অভিনয়ের জন্য নাটকটি অনুমোদন করলেন। সে সময় মেয়েরা অভিনয় করত না। তাই নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করলেন বুদ্ধদেবের বন্ধু পরিমল। নায়িকার ভূমিকায় সুদেব। আর স্বয়ং বুদ্ধদেব হলেন প্রম্পটার।
পরের বছরও বুদ্ধদেবের লেখা নাটক মঞ্চস্থ হলো জগন্নাথ হলে।
কলকাতায় আসার পরও নাটক লেখা চালিয়ে যান বুদ্ধদেব বসু। ‘রাবণ’ নামে সেই নাটক কী এক অজ্ঞাত কারণে আর মঞ্চের মুখ দেখেনি। বুদ্ধদেবের ধারণা ছিল, এই নাটকই তাঁর অভাব ঘোচাবে। কিন্তু হিতে বিপরীত হলো। বুদ্ধদেব তখন আর নাটক লিখছেন না, কবিতাও নয়। নগদ মূল্যে লিখছেন উপন্যাস আর ছোটগল্প।
আর লিখছেন ছোটদের জন্য। তিনি বুঝে গিয়েছিলেন, এটা ঢাকা নয়। এখানে দৈনিক খাদ্য আপসে মিলবে না, নিজেকেই নিজের অন্ন জোটাতে হবে। মনে একটা কষ্ট ছিল বটে, কিন্তু যখন ভাবতেন এই টাকা নিজের অর্জনের, তখন সত্যিই খাবারটা অনেক বেশি সুস্বাদু লাগত।
শুধু লিখে জীবন চলত না। একই সঙ্গে নতুন প্রকাশকের সন্ধান, পাওনা টাকা আদায়ের জন্য প্রকাশকের পেছনে ঘোরাঘুরি—তেতো কাজগুলোও করতে হতো। লেখার সঙ্গে যে নানা ধরনের পরিশ্রমের যোগ আছে, তা এবার বুঝলেন তিনি।
সূত্র: বুদ্ধদেব বসুর প্রবন্ধসমগ্র, ১, খণ্ড, পৃষ্ঠা ১১০-১১২