শিশুর মতোই সরল ছিলেন জি সি দেব। দর্শনই ছিল তাঁর জীবন। খুব দ্রুত হাঁটতেন। ৫ নম্বর সেক্রেটারিয়েট রোডের বাড়িতে যখন থাকতেন, তখন সেই বাড়ির আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য ছিল না। বাড়িটিকে আলাদাভাবে মানুষ চিনত শুধু বাড়ির কর্তার কারণে। জি সি দেব নামটিই ছিল আকর্ষণ।
পরনে থাকত ধুতি আর হাতাওয়ালা গেঞ্জি। শীতকালে তার ওপর চড়ত সাদা চাদর। এটুকুতেই খুশি। হাঁটতেন যখন, তখন সব সময়ই কেউ তাঁর সঙ্গী হতো। অনবরত কথা বলে যেতেন তিনি। ধরে রাখতেন সঙ্গীর হাত। তাঁর সঙ্গে প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে চলতে হতো সঙ্গীকে। কখনো হাতটা যদি ছেড়ে দিতেন, তাতে যদি সঙ্গী ভেবে থাকেন রক্ষা হলো, তাহলে ভুল করতেন। একটু পরই খপ করে আবার ধরতেন হাতটি।
বিদেশে প্রথমবার তিনি গিয়েছিলেন বৃদ্ধ বয়সে। মার্কিন দেশে ভারতীয় দর্শনের ওপর বক্তৃতা করার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। এবার তো মহা দুশ্চিন্তা। ও দেশে গেলে কী খাবেন? কী পরবেন? খাওয়ার প্রসঙ্গ মিটল এভাবে: মাছ-মাংস না খেলে সমস্যা হবে না, দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্য দিয়েই সামলে নেবেন। কিন্তু পোশাক? ধুতি আর গেঞ্জি পরে তো আর যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া যায় না।
অনেক আলোচনা হলো বন্ধু ও সতীর্থদের মধ্যে। কোট, প্যান্ট, টাই জীবনে পরেননি। কিন্তু এবার পরতে হবে। ধুতি পরতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কে ধুতি ধুয়ে দেবে তাঁকে? কে করবে ইস্তিরি? অতএব প্যান্ট! জিসি দেব কিন্তু মোটাসোটা ছিলেন না। তাঁর মুখ আর পেটটা ছিল বিশাল। শরীর রোগাপটকাই। কায়িক পরিশ্রম করেননি। ছিলেন ভোজনরসিক, তাই এ অবস্থা। টাই-কোটের পরেও তাঁর বেঢপ শরীরের জন্য অস্বস্তি হচ্ছিল সবার। কিন্তু শেরওয়ানি পরার পরই সব হয়ে উঠল স্বাভাবিক। সেভাবেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান, বক্তৃতা করেন এবং তাঁর অনেক অনুসারী দাঁড়িয়ে যায়।
সেই অমায়িক অধ্যাপক গোবিন্দচন্দ্র দেব বা জি সি দেবকে একাত্তরের ২৬ মার্চ সকালে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদারেরা।
সূত্র: হায়াৎ মামুদ, গোবিন্দচন্দ্র দেব, জীবন ও দর্শন, পৃষ্ঠা: ১৭৮-১৮০