হোম > ছাপা সংস্করণ

আমরাও পারব, আজ না হলে কাল

ড. সুব্রত বোস

আমরাও পারব, তবে সত্য একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে হবে। সুন্দর পিচাই, গুগলের সিইও। এক ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানি। সত্য নাদেলা, মাইক্রোসফটের সিইও। মার্কেট ভ্যালু মোটামুটি একই রকম। এক ট্রিলিয়ন ডলার। শান্তনুর নারায়ণ, সফটওয়্যার কোম্পানি অ্যাডোবির সিইও। অরভিন্দ কৃষ্ণা, আইবিএমের। আইবিএম হলো বিশ্বের অন্যতম সফটওয়্যার এবং প্রযুক্তি পরামর্শক কোম্পানি। সঞ্জয় মেরোতা মাইক্রোনের; নিকেশ ওরোরা পালো, আলটোর; জয়শ্রী উল্লাল আরিশটা নেটওয়ার্কের। প্রযুক্তি বা পরামর্শক কোম্পানিতে ভারতীয় সিইওদের এই তালিকা অনেক দীর্ঘ। সম্প্রতি এই তালিকায় যোগ হয়েছেন আরও একজন। টুইটারের সিইও পরাগ আগরওয়াল। এর আগে পেপসির ছিলেন সিইও ইন্দিরা নুয়ই, ম্যানেজমেন্ট কনসালটিং কোম্পানি ম্যাকেঞ্জির সিইও ছিলেন রজত গুপ্ত। টেকনোলজি থেকে পরামর্শক–বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বছরের পর বছর ধরে ভারতীয় পেশাজীবীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন স্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন ভারতীয়রা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একই চিত্র।

পাশ্চাত্যের তুলনায় সস্তা শ্রম, অভিজ্ঞতা, পেশাগত দক্ষতা, পেশাজীবীর সংখ্যা, স্বল্প সময়ে পেশাজীবীর নিয়োগের সুবিধা, কোম্পানির প্রতি আনুগত্যসহ বিভিন্ন কারণে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো একের পর এক ভারতে শাখা বিস্তার করে চলেছে। দুই দশকে এর ব্যাপ্তি কল-সেন্টার থেকে ছাড়িয়ে গেছে। জটিল গাণিতিক সফটওয়্যার নির্মাণ বা বহুজাতিক কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণ, সবকিছুর জন্যই পাশ্চাত্যের কোম্পানিগুলোর পছন্দের তালিকায় ভারত এখনো শীর্ষে রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ভারতে অবস্থানরত পেশাজীবীদের বেতন পাশ্চাত্যের পেশাজীবীদের প্রায় সমান। তারপরও দক্ষতার কারণে অনেক কোম্পানিই ভারতকে বেছে নিচ্ছে। জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তরের এক দারুণ উদাহরণ ভারত। এই দক্ষ জনগোষ্ঠীর ওপর ভিত্তি করেই ভারতে একের পর এক গড়ে উঠছে বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি। এই সংখ্যা ৩৩৫-এর মতো, যা কিনা জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডা এবং সাউথ কোরিয়া থেকে বেশি। অতিমারির মধ্যেই এ বছরে, ভারতে ৩৩টির বেশি স্টার্টআপ কোম্পানি এক বিলিয়ন ডলারের ক্লাবে পৌঁছে গেছে।

এই দক্ষ জনগোষ্ঠীই বিশ্বজুড়ে আধুনিক ভারতের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমীহ আদায় করেছে গোটা বিশ্বের। আত্মবিশ্বাসী এক নতুন প্রজন্ম গড়ে উঠছে। বাবা ছোটখাটো চাকরি করেন। মা গৃহিণী। দুই কামরার ঘর। সাধারণ স্কুল। সেখান থেকে তীব্র প্রতিযোগিতা করে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকা। এ রকম স্বপ্নবাজ যুবকেরাই গুগল, মাইক্রোসফট আর অ্যাডোবির সিইও হচ্ছেন। সবকিছুই সম্ভব। ভারতীয় তরুণ-তরুণীদের কাছে এটা একেবারে সত্য হয়ে গেছে। দাঁতে দাঁত চেপে লেগে থাকো, ভালো করে পড়াশোনা করো, আর প্রথম সারির ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ঢুকে যাও। ভারতীয়দের এই সাফল্যের একটা বড় কারণ, স্বাধীনতার পর থেকে সে দেশে একের পর এক বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষার গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সিইওদের অনেকেই এসেছেন আইআইটির মতো অভিজাত ভারতীয় প্রতিষ্ঠান থেকে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তোলার পেছনে ছিলেন পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু। কেমব্রিজ-শিক্ষিত নেহরু তাঁর সময়ের রাজনৈতিক নেতাদের চেয়ে অনেক দূরদর্শী ছিলেন। ইতিহাস, সমাজ, সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞানে তাঁর সমান আগ্রহ ছিল। আগ্রহ বললে ভুল হবে। আসলে ছিল অগাধ পাণ্ডিত্য। ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া বা গ্লিম্পসেস অব ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রিতে নেহরুর মেধা-মনন আর আন্তর্জাতিকতার প্রমাণ পাওয়া যায়। সাতচল্লিশের স্বাধীনতার পরে ভারতের সমস্যার অন্ত ছিল না। প্রায় ৮০ লাখ শরণার্থী। খাদ্যের সমস্যা। পাঁচ শর মতো ছোট ছোট রাজ্য, যা কিনা রাজা-মহারাজা-শাসিত। ভারত প্রজাতন্ত্রে তাদের যুক্ত করার তাগিদ। নানাবিধ চাপ সত্ত্বেও নেহরু সুদূরপ্রসারী স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত নেহরু জানতেন দারিদ্র্য থেকে মুক্তির উপায় বিজ্ঞান-প্রযুক্তি। সাধ্যের বাইরে গিয়েছিলেন নেহরু। মন দিয়েছিলেন একাধিক বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ছিল গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ১৯৫১ সালে গড়ে উঠল খড়গপুর আইআইটি, তারপর বোম্বে, চেন্নাই, কানপুর আর দিল্লি। বিক্রম সারাভাই, মেঘনাথ সাহা, সিভি রমন, হোমি ভাবা। নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশ্বমানের বিজ্ঞানী। তাঁদের দায়িত্ব দিলেন বিজ্ঞান গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করার জন্য নিয়ে এসেছিলেন প্রশান্ত মহলানবিশের মতো খ্যাতিমান পরিসংখ্যানবিদকে। স্বাধীনতার পরবর্তী ১০ বছরে ভারতে ২২টির মতো স্বয়ংসম্পূর্ণ বিজ্ঞান গবেষণাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতের মহাকাশ জয় এই গবেষণাগার প্রতিষ্ঠার কারণে আজ সফল হয়েছে। স্বাধীনতার পর ভারতের প্রায় ৭০ শতাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল। তারপরও পণ্ডিত নেহরু তাঁর দূরদর্শিতার কারণে প্রতিষ্ঠান গড়তে মন দিয়েছিলেন। ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আজ একজন-দুজন নয়, লাখ লাখ পেশাজীবী তৈরি করছে। নেহরু স্বপ্ন দেখেছিলেন, স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন। স্বপ্নের রূপকার খুঁজে বের করতে নেহরু একদমই ভুল করেননি। শুরুটা যেকোনো সময় করা যায়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দারুণ অগ্রগতি হয়েছে। কৃষিতে, বিশেষ করে বিভিন্ন রকমের ফল, মাছ চাষে আমরা বিশ্বের একটি প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়েছি। কৃষিকে কেন্দ্র করে আমাদের সুদূরপ্রসারী উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা নেওয়া যেতে পারে। গড়ে তোলা যেতে পারে একাধিক গবেষণাগার। আপাতদৃষ্টিতে হয়তো সেই পরিকল্পনা আমাদের সাধ্যের বাইরে হতে পারে। হোক না। কিন্তু সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যেতে পারলে, আগামী কয়েক প্রজন্ম এর সুফল পাবে। বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বাড়ছে, কমে যাচ্ছে আবাদি জমির পরিমাণ। আমাদের বিজ্ঞানীরা একাধিক উচ্চফলনশীল বিভিন্ন জাতের ফসল তৈরি করছেন। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এটাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আগামী ২৫ বছরে বিশ্বব্যাপী দক্ষ জনগোষ্ঠীর সংকট দেখা দেবে। অঙ্ক, কম্পিউটারবিজ্ঞান, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো বিষয়গুলোয় দক্ষ জনগোষ্ঠীর এখনই বেশ বড় ধরনের চাহিদা শুরু হয়েছে। উচ্চমানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা গেলে দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি করা খুব কঠিন নয়। সমস্যাটা হলো ‘মান’ নিয়ে। মান নিশ্চিত করার জন্য দরকার দেশপ্রেমিক দূরদর্শী বিশ্বমানের শিক্ষকের। প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, সদিচ্ছা আর স্বপ্নবাজ মানুষের। যিনি কিনা নিজে স্বপ্ন দেখতে পারেন, সঙ্গে অন্যদেরও স্বপ্ন দেখাতে পারেন।

ভারত পেরেছে, চীন পেরেছে। পাশ্চাত্যের দেশগুলো থেকে শিক্ষিত মেধাকে নিজ দেশে নিয়ে গেছে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিয়ে। একটা বড় অংশ ফিরে গিয়ে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় আর গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬৫ লাখ শিক্ষার্থী বিদেশে পড়তে এসেছিলেন। ৪০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী পড়ালেখা শেষ করে ফিরে গেছেন দেশে। তাঁদের একটা বড় অংশ চীনের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং গবেষণাকাজে যোগ দিয়েছেন। শিক্ষা শেষ করে দেশে ফেরার হার চীনের মতো না হলেও ভারতীয়রা আগের তুলনায় বেশি নিজ দেশে চলে যাচ্ছেন বিদেশে উচ্চশিক্ষা শেষ করার পর। মেধাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা শুরু হলে, কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে, বিদেশে অবস্থানরত উচ্চশিক্ষিত বাংলাদেশি পেশাজীবীদের একটা বড় অংশ ধীরে ধীরে দেশে যেতে শুরু করবেন। বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষিত করতে পারবেন মেধাভিত্তিক অর্থনীতির জন্য। বিশ্ববিদ্যালয় আর গবেষণাগারগুলোকে ‘প্রতিষ্ঠানে’ রূপ দেওয়ার জন্য ‘ভিশনের’ প্রয়োজন রয়েছে। সেই সঙ্গে একাধিক মানুষের নিরলস সৎ প্রচেষ্টা।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ