হোম > ছাপা সংস্করণ

মেহেদীর স্বপ্নের বাতিঘর

আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা 

গাইবান্ধা সদর উপজেলার শেষ প্রান্তের গ্রাম টেংগরজানী। ভ্যানে চড়ে গ্রামের ভেতরে কিছুদূর যেতেই চোখে পড়ে একটি সাইনবোর্ড। নাম ‘বই ঘর পাঠাগার’। ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল বই পড়ায় মগ্ন গ্রামের কয়েকজন নারী ও স্কুলপড়ুয়া কিশোর-কিশোরী। আছে শিশুরাও।

প্রত্যন্ত এই গ্রামে এত সুন্দর পরিপাটি পাঠাগার কে করলেন—কৌতূহলবশত জানতে চেয়েছিলাম পাঠকদের কাছে। তারা জানাল মেহেদী হাসানের নাম। এই মেহেদী হাসান কিন্তু আয়-রোজগার করা কোনো মানুষ নন, ২০ বছরের কম বয়সী এক তরুণ। সবে সম্মান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। গাইবান্ধা সরকারি কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে পড়েন। মেহেদী যখন ২০২০ সালে এই পাঠাগার গড়ে তোলেন, তখন তাঁর বয়স ছিল আরও কম। কোনো কিছু গড়ে তোলার জন্য বয়স যে বাধা নয়, সেটা প্রমাণ করেছেন তিনি।

এই বয়সী তরুণেরা যেখানে নানা দিকে ঝুঁকছেন, সেখানে মেহেদীর মাথায় প্রত্যন্ত গ্রামে পাঠাগার গড়ার স্বপ্ন কেন, অর্থ জোগাড়ই-বা হলো কীভাবে—এসব নিয়ে কথা হয় স্বপ্নবাজ এই তরুণের সঙ্গে। মেহেদী বলেন, ‘দেশের বেশির ভাগ পাঠাগার শহরকেন্দ্রিক বলে আমরা যারা গ্রামে বসবাস করি, তাদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা বড় সমস্যা। এ কারণে গ্রামের তরুণ প্রজন্ম এখন বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে গেমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বই থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তাই আমার পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি পরিচিতজনের কাছ থেকে বই সংগ্রহ শুরু করি। ধীরে ধীরে হাজারখানেক বই হয়ে গেলে মা-বাবার সহযোগিতায় ২০২০ সালে পাঠাগারটি চালু করি।’

মেহেদীর পাঠাগারে এখন বইয়ের সংখ্যা এক হাজারের বেশি। সাহিত্য, ইতিহাস, বিজ্ঞান, জীবনী, ম্যাগাজিন, দৈনিক সংবাদপত্র, মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সসহ শিশুদের উপযোগী বিভিন্ন বই আছে এখানে। অনেকেই শুধু বিশ্রাম নিতে এসেও আকৃষ্ট হচ্ছেন এসব বইয়ের দিকে। বই ঘর পাঠাগারে যেমন শিক্ষার্থী ও উৎসাহী মানুষ বই পড়তে আসছেন, তেমনি আসছেন শিক্ষক, শিক্ষিকাসহ বিভিন্ন পেশার বইপ্রেমীরা। ফলে পাঠাগারটিকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে গড়ে উঠছে একধরনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলন।

নিজ গ্রামে এমন একটি পাঠাগার হবে, সেটা কোনো দিন ভাবতে পারেননি টেংগরজানী গ্রামের শিক্ষার্থী আফরোজা আক্তার। কিন্তু এখন পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিদিন পাঠাগারে গিয়ে পছন্দের কোনো না কোনো বই পড়ছেন তিনি ও তাঁর বন্ধুরা। শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের বাড়ি থেকে চার-পাঁচ মিনিট হেঁটে ওই পাঠাগারে যাওয়া যায়। তাই সময় পেলে পাঠাগারে গিয়ে বই পড়ি এবং সেখান থেকে বই বাড়িতে নিয়ে আসি।’

পাঠাগারটি তৈরি হওয়ায় গ্রামের দৃশ্যপট অনেকটা বদলে গেছে। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে যে কিশোর-কিশোরীরা মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করত, তাদের অনেকেই এখন এ পাঠাগারের সদস্য। পাঠাগারটি একদিকে যেমন বই পড়ার অভ্যাস তৈরি ও ধরে রাখতে কাজ করে যাচ্ছে, তেমনি মোবাইল ফোন আসক্তি থেকে দূরে রাখতেও মানুষকে সচেতন করার কাজ করছে। ইতিমধ্যে পাঠাগারটি শিশুদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

মেহেদী হাসানের উদ্যোগ ও অর্থায়নে বই পড়ার এই আন্দোলনে দারুণ খুশি নিশাদ বাবু নামের এক পাঠক। তিনি বলেন, ‘এটা সত্যিই বিরল। তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি গ্রামের পাঠকের চাহিদা পূরণ করে আসছেন। এতে যে শুধু গ্রামের মানুষ উপকৃত হচ্ছে তা নয়, আশপাশের অনেক মানুষ বই ঘর পাঠাগার থেকে জ্ঞান অর্জন করছে।’ 

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ