হোম > ছাপা সংস্করণ

মেরুদণ্ডের রাজনীতি ঠিক করুক পথচলা

অজয় দাশগুপ্ত

আজকাল মেরুদণ্ডসম্পন্ন বাঙালি খুঁজে পাওয়া যায় না। মেরুদণ্ড বলতে আমরা যা বুঝি, তাতে কোনো ধোঁয়াশা কিছু নেই। কথা না বাড়িয়ে আমরা যদি কয়েকজনের নাম বলি, তাহলেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে উঠবে। নেতাজি সুভাষ বোস, স্বামী বিবেকানন্দ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কিংবা তাজউদ্দীন আহমদের জীবন জানলেই বোঝা সম্ভব মেরুদণ্ড কাকে বলে। আমি যেসব মানুষের কথা বললাম, তাঁদের মধ্যে তিনজনই ছিলেন রাজনৈতিক নেতা, যাঁদের দেখলে, জানলে বা পাঠ করলে আপনি মেরুদণ্ডের সন্ধান পাবেন। অনায়াসে বুঝবেন বাঙালির শিরদাঁড়া তখন কতটা শক্ত ছিল।

সুভাষ বোস ইংরেজের মতো পরাশক্তির চোখে ছিলেন ত্রাস। তখনকার ইংরেজ ছিল এখনকার আমেরিকার চাইতেও শক্তিশালী। নেতাজি আপস জানতেন না। মাথা নোয়াননি বলে বিস্তর কষ্ট আর যন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন সারা জীবন। এমনকি তাঁর অন্তর্ধানের রহস্যও উন্মোচিত হয়নি। তাতে কী? যত দিন যাচ্ছে, নেহরুকে ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠছেন তিনি। স্বামী বিবেকানন্দ আজীবন সাম্রাজ্যবাদ আর প্রভুত্বের বিরুদ্ধে লড়েও ছিলেন ঋষি। আর বঙ্গবন্ধু? তাঁর মতো জীবন কজনের আছে? যিনি জীবনের এক বিরাট অংশ কাটিয়েছেন কারাগারে। পাকিস্তানের মতো বর্বর সামরিক জান্তাদের সঙ্গে লড়াই করার বুকের পাটা ছিল না সবার।

তিনি সেই বাঙালি, যিনি জীবন-যৌবন ত্যাগ করে আমাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এমন একটি দেশ এনে দেওয়া কি মুখের কথা? আপসহীন বঙ্গবন্ধুই তা পেরেছিলেন। আর তাজউদ্দিন আহমদ? তিনি আমাদের আন সাং হিরো। রক্তক্ষয়ী ৯ মাসের সংগ্রাম সামাল দিয়েছিলেন তিনি।কোনো ভয়ভীতির সামনে আপস করেননি, মাথা নোয়াননি।

এই যে বাঙালিরা, তাঁরা সবাই সাধারণ পরিবারের অসাধারণ সন্তান। আজকের দুনিয়ায় পরিবর্তিত পৃথিবীতে জীবন আগের মতো নেই। এখন ঘরে বসে দুনিয়াকে হাতের মুঠোয় নেওয়া যায়। চাইলেই দুনিয়া ঘুরে আসা যায় এক নিমেষে। এই বায়বীয় জগতের নিন্দা করে লাভ নাই। আজ মানুষের জীবন অন্তর্জালে বন্দী।

ভালো-মন্দ মিশিয়ে গড়ে ওঠা এই জগৎকে অস্বীকার করা যাবে না। বরং যিনি বা যাঁরা এর সঠিক ব্যবহার করছেন, তাঁরাই সফল। এই সফল হওয়ার লড়াইয়ে মাঠের রাজনীতি চলে না। কিন্তু  রাজনীতি থেমে নেই। সেও যুগের হাওয়ায় তার পথ বদলেছে। কিন্তু রাজনীতি ফুরিয়ে যায় না। এ কথা মনে রাখলে আমাদের রাজনীতিবিদেরা এমন সব কাণ্ড বা নিজেদের এমন ইমেজ তৈরি করতেন না, যা মানুষকে তাঁদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করেছে।

মূলত দলান্ধদের দখলে রাজনীতি। সরকারি ও বিরোধী দল কেউই নিজেদের চিন্তার বাইরে পা ফেলতে পারছে না। সরকারি দলের জন্য বিষয়টা কতটা অস্বস্তিকর ও বিপদের তা হয়তো তারা এখনো টের পাচ্ছে না। অথচ এত এত ভালো কাজের পরও তাদের আচার-আচরণ আর বিশ্বাসে আছে ভয়। মুখে তারা যা-ই বলুক, ভেতরে তাদের জানা পরিবেশ বা জনমনে প্রভাব কতটা? আর সঠিক নির্বাচন হলে ফলাফল কী হতে পারে? ভয় পেলে মানুষ যা যা করে, ঠিক যেন তারই মহড়া দেখি মাঝে মাঝে। আমরা প্রবাসী বাংলাদেশি। আমাদের বসবাসের দেশগুলোতেও দেশের রাজনীতি আর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের রমরমা অবস্থা। সিডনিতে বসে দেশের ভাগ্য নির্ধারণ করার মতো ভাবনাচিন্তা করার মানুষ অসংখ্য। তাঁদের মধ্যে যাঁরা সরকারি দলের, তাঁরা কোনো বিরোধিতা মানতেই নারাজ। দীর্ঘকালের স্বজনদের কথাও শুনতে নারাজ। বাকি যাঁরা অন্যদিকে, তাঁরা আছেন অপপ্রচার আর দেশবিরোধিতায়। আজকাল দেশের বাইরে যে পরিমাণ দেশবিরোধিতা বা সরকারবিরোধিতা চলে, তা ভাবাও কষ্টকর।

ডিজিটাল দুনিয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের তারুণ্য যে জগতের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাতে বিশ্ববরেণ্য নেতাদের চেহারা আলাদা। তারা দেখছে দেশে দেশে সেই সব নেতার মেধা ও জ্ঞানের প্রখরতা। আমরা ভুলে যাব না, ইংল্যান্ডের মতো বনেদি গণতন্ত্রের দেশে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন ঋষি সুনাক। আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন কমলা হ্যারিস। আরও অনেক দেশে যেসব মেধাবী এশিয়ান ও উপমহাদেশের মানুষ উঠে আসছেন, তাঁদের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে হতাশ হওয়ার বিকল্প থাকে না। কারণ আমাদের সমাজ থেকে তেমন নেতার পাট উঠে যাওয়ার পথে, যাঁরা মূলত আলোর দিশারি।

বাংলাদেশ এগিয়েছে। সামনে আরও এগোবে। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে এই অগ্রযাত্রা সমুন্নত রাখতে হলে মেধার বিকল্প নেই। আপসহীন রাজনীতিই পারবে মেধাকে এগিয়ে দিতে। আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেই বিদেশে আসেন। ঘন ঘন আসেন এমন নেতাও কম নন। তাঁদের কাছে একটাই আবেদন, দেশের ভোটাভুটিকে কেন্দ্র করে যে উত্তাপ আর অনিশ্চয়তা, তার অবসান হবে আপনাদের কর্মকাণ্ডে। আপনারা বিদেশে শপিংয়ের পরিবর্তে দেশগুলোর ধ্যানধারণা আর পথ চিনে ফিরে গেলে ভালো করবেন। যদি সেগুলো কাজে লাগান, তো আরও ভালো হবে।

বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, শেখ হাসিনা ছাড়া তেমন কেউ এখন দৃশ্যপটে অনুপস্থিত। তিনি থাকতে থাকতেই এর সুরাহা করা গেলে উন্নতি-অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে না। আগেই লিখেছি, এখন কেউ সমালোচনা সহ্য করতে চায় না। সমালোচনা আর নিন্দা যে এক বিষয় নয়, তা-ও বোঝে না এরা। ফলে আমার মতো প্রবাসীদের চাওয়া একটাই—মেধাসম্পন্ন, মেরুদণ্ডসম্পন্ন মানুষদের রাজনীতিতে জায়গা করে দেওয়া হোক। যাঁরা স্তাবকতা বা স্তুতির পরিবর্তে হক কথা বলেন। যাঁরা 
নেতৃত্ব মেনেই নিজের শিরদাঁড়া সটান করে চলেন।

মহামারি কোভিড-১৯ পরিস্থিতির আগেই চীন-আমেরিকা রেষারেষি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে বাণিজ্যযুদ্ধকে কেন্দ্র করে, চীনা পণ্যের ওপর শুল্কারোপের মাধ্যমে।তাইওয়ানকে দখলে নিতে চায় বেইজিং। তাইওয়ান ও চীনের মাঝে নাক গলালে ছেড়ে কথা বলবে না আমেরিকাকে, হুঁশিয়ারি চীনের।

করোনা-পরবর্তী বিশ্বরাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একক পরাশক্তি হিসেবে গুনবে কি না—এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি মন্তব্য করছে আন্তর্জাতিক মহল। করোনা মোকাবিলায় ওয়াশিংটনের দুর্বলতার ছাপ ফুটে উঠেছে বিশ্বরাজনৈতিক মহলে। ওয়াশিংটনকে পরাশক্তি বললেও একক পরাশক্তি বলা যায় না গত দুই দশকের প্রেক্ষাপটে।

ফলে ভয় নয়, নিজেদের অবস্থান সঠিক রেখে মেধা ও তারুণ্যকে সঙ্গে নিয়ে চললেই আমাদের জয় নিশ্চিত। যাঁরা তা করবেন, ভবিষ্যৎ তাঁদের গলায়ই জয়মাল্য দেবে।

লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী কলামিস্ট

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ