ষাটোর্ধ্ব শান্তি খাতুন। শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বজ্রপাতের ঘটনায় শুধু স্বামীকে নয়; ছেলে, মেয়ের জামাই, নাতি ও দেবরকে হারিয়েছেন। এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তিনি। এলাকাবাসীও সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না। গতকাল শুক্রবার সকালে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার শিবপুর গ্রামে এ দৃশ্য দেখা মেলে।
বজ্রপাতে শান্তি খাতুনের পরিবারের পাঁচজনসহ মাটিকোড়া গ্রামের চারজন নিহত হয়েছেন। তাঁদের বাড়িতেও চলছে মাতম। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তাঁদের লাশ দাফন সম্পন্ন হয়।
গতকাল সকালে উপজেলার শিবপুর গ্রামে দেখা যায় বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন বজ্রপাতে নিহত শমসের আলীর স্ত্রী শান্তি খাতুন। একই সঙ্গে বজ্রপাতে ছেলে শাহীন, জামাতা মোকাম হোসেন, নাতি মোন্নাফ হোসেন ও দেবর আফসার আলীকেও হারিয়েছেন তিনি।
শান্তি খাতুন বলেন, ‘আমার পরিবারে আর কিছুই রইল না। গতকাল (বৃহস্পতিবার) ঠ্যাটা পরে আমার স্বামী, সন্তান, মেয়ের জামাই, নাতিসহ পাঁচজন মারা গেছে। এই শোক আমি সইতে পাছিনা।’
শিবপুর গ্রামের বাসিন্দা সোলেমান হোসেন বলেন, ‘শমসেরের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার মতো গ্রামবাসীর ভাষা জানা নেই। এই পরিবারটা এখন এতই অসহায় হয়ে পড়ল যে তাদের কাজ করে পরিবার চালানোর আর কেউ থাকল না।’
একই চিত্র মাটিকোড়া গ্রামেও। এই গ্রামের দুই শিশুসহ চারজন নিহত হয়েছেন বজ্রপাতে। তাঁরা হলেন নজরুল ইসলামের ছেলে শাহ আলম (৪০), বাহাদুর আলীর ছেলে আবদুল কুদ্দুস (৬০), আলীম মিয়ার মেয়ে রিতু খাতুন (১৩) এবং মোস্তফা মিয়ার মেয়ে আউলিয়া জান্নাতী (৭)।
এদিকে, ওই দুটি গ্রাম পরিদর্শন করেছেন সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম। নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রতি পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার পঞ্চক্রোশি ইউনিয়নের মাটিকোড়া গ্রামে ধানের বীজ সংগ্রহ করছিলেন কয়েকজন। এ সময় বজ্রপাতে নিহত হন ছয়জন। আহত হন অন্তত ছয়জন। তাঁদের হাসপাতালে নেওয়ার পথে দুই শিশুসহ আরও তিনজন মারা যান।