কাবুল ছেড়ে যাওয়ার প্রায় ছয় মাস পর যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গে নতুন জীবন শুরু করছে সাইদ এবং তাঁর পরিবার। এখন যুক্তরাষ্ট্রেই ভবিষ্যৎ গড়তে চাইছেন আফগান নিরাপত্তা বাহিনীতে কাজ করা সাইদ। একই ইচ্ছা দেশ ছেড়ে আসা তাঁর মতো অনেক আফগান শরণার্থীর। কিন্তু জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা যেন তাঁদের পিছু ছাড়ছে না।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাইদ বলেন, ‘আমার প্রথম অগ্রাধিকার হলো অভিবাসনসংক্রান্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করা। কারণ, নিজ দেশে (আফগানিস্তান) আমাদের এখন কোনো জায়গা নেই। সেখানে অনানুষ্ঠানিকভাবে আমাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।’
স্থানীয় আইনজীবীরা বলছেন, সাশ্রয়ী আবাসন থেকে শুরু করে ‘ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস’ সমাধানের মতো কাঠামোগত বিষয়গুলো অভিবাসী আফগানদের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের ক্ষেত্রে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।
‘ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস’
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট (ডিএইচএস) জানিয়েছে, বর্তমানে কাবুল থেকে উদ্ধার করে আনা মাত্র ১ হাজার ২০০ জন আফগান নাগরিক মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে রয়েছেন। কিন্তু আফগানিস্তান থেকে যাদের উদ্ধার করা হয়েছে তাঁরা মূলত শরণার্থী। কারণ, আইনি দিক থেকে তাঁদের ‘ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস’ শরণার্থী পুনর্বাসন কর্মসূচির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আসা ব্যক্তিদের মতো নয়।
ডিএইচএস বলছে, গত আগস্টে নিজ দেশ থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসা অধিকাংশই আফগান নাগরিককে মানবিক দিক বিবেচনায় আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ নেই তাঁদের। গত মাসের শেষের দিকে এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, আফগানিস্তানে ২০ বছরের দীর্ঘ যুদ্ধের সময় মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে কাজ করা আফগানদের জন্য প্রণয়ন করা বিশেষ অভিবাসী ভিসা (এসআইভি) প্রোগ্রামের জন্য যোগ্য বিবেচিত হয়নি যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া সাড়ে ৩৬ হাজারের বেশি আফগান শরণার্থী।
এসআইভি প্রোগ্রামের আওতায় না পড়াদের একজন আলী। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এই আফগান নাগরিক আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমি শুনেছি, যাদের এসআইভি নেই মার্কিন সরকার তাদের এক বা দুই বছর পর নির্বাসনে পাঠাবে। বিষয়টি স্পষ্ট নয়। কারণ, অনেকেরই এসআইভি নেই।’
পুনর্বাসন
এদিকে পালিয়ে আসা আফগান নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে তাঁদের নিজস্ব পছন্দের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়েছে, যেখানে তাঁদের কোনো আত্মীয় বা বন্ধু আছে। এ ছাড়া তাঁরা শরণার্থী পুনর্বাসন কর্মসূচির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে আসা লোকদের মতো একই পরিষেবা পাওয়ার অধিকারী, যার মধ্যে কাজের পারমিট এবং পুনর্বাসন সংস্থাগুলোর সাহায্যও অন্তর্ভুক্ত।
কিন্তু শরণার্থী আফগানদের প্রাথমিক চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো, সাশ্রয়ী আবাসন খোঁজা, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিনিয়ত জীবনযাত্রার খরচ বাড়ছে।