হোম > ছাপা সংস্করণ

সেলাই দিদিমণি এখন কম্পিউটার আপা

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)

‘দিদিমণি দিদিমণি সেলাই দিদিমণি; আরে উদয়াস্ত খাটো তুমি, ছড়াও দেহের ঘাম, মহাজনে দেয় কি তোমার ঘামের সঠিক দাম?’ সেলাই দিদিমণির কষ্টমাখা জীবনের কথা গানে গানে বলেছেন নগরবাউল জেমস। গানের ব্রিজ লাইনে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে রঙিন দিনের আশার কথাও বলতে ভোলেননি এই গায়ক। সেই গানেরই যেন বাস্তব এক চরিত্র মানিকগঞ্জের ফারহানা আফরোজ লিপি। তবে এই দিদিমণির রঙিন দিনের ধরনটা একটু ভিন্ন।

অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম কাজে লাগিয়ে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন লিপি। যাত্রাপথে লোকের কটু কথা হজম করেছেন। আর্থিক সংকটে চোখমুখে অন্ধকার দেখেছেন। কখনো কখনো ঋণের বোঝার দায় মাথা পেতে নিয়েছেন। তবু হার মানেননি। ২০ বছর আগের সেই সেলাই দিদিমণি এখন ‘কম্পিউটার আপা’।

১৯৯৮ সালের কথা। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার প্রত্যন্ত জোকা গ্রামে পরিবারের সঙ্গে বেড়ে ওঠা লিপি সবে কলেজে ভর্তি হয়েছেন। এ সময়ই মারা যান তাঁর বাবা আনোয়ার হোসেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে দুর্যোগ নেমে আসে পরিবারে। বাবা মারা যাওয়ার আগে বড় বোনের বিয়ে হয়। ছোট দুই ভাই, এক বোন আর মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে টিউশনি করানো শুরু করেন লিপি। একপর্যায়ে জামা-পাঞ্জাবি সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন তিনি। হয়ে ওঠেন সেলাই দিদিমণি। জামা বানিয়ে সেগুলো পাঠাতেন একটি এনজিওতে। সেখান থেকে যা পেতেন, সেটা দিয়ে পরিবার চলত না।

২০০৩ সালের দিকে মানিকগঞ্জ পৌর সুপার মার্কেটে বিট-বাইট কম্পিউটার সেন্টারে ফ্রিতে কম্পিউটার শেখার সুযোগ পান লিপি। তখনো তিনি সেলাইয়ের কাজ ছাড়েননি। কম্পিউটারটা ভালোভাবে বুঝে গেলে একপর্যায়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পাশাপাশি একই সেন্টারে তিনি প্রশিক্ষক হয়ে যান। পারিশ্রমিক পান মাসে দুই হাজার টাকা।

অদম্য এই নারীর ভাবনায় তখন থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল।

লিপি বলেন, ‘২০০৯ সালের মার্চ মাসের দিকে এক হাজার টাকায় স্থানীয় মার্কেটে দোকান ভাড়া নিয়ে সেখানেই শুরু করি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টার। নারী হয়ে এমন কাজ করায় গ্রামের লোকেরা অনেক কটু কথাও বলেছিল আমাকে।’ কিন্তু তাতে কী, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ফেলেন বলে জানান লিপি। এরপর করেন বিয়ে। স্বামী রকিবুল হাসান পাভেলের কাঁধে চাপিয়ে দেন ‘লিপি কম্পিউটার সেন্টারের’ সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব। এর মধ্যেই গ্রামের লোকজন ‘কম্পিউটার আপা’ বলে ডাকা শুরু করে তাঁকে।

২০২০ সালের মাঝামাঝিতে লিপি চলে আসেন রাজধানী ঢাকায়। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘করোনার সময় মিরপুরে এসে কম্পিউটার সেন্টার খুলি। শতাধিক প্রশিক্ষণার্থী পেয়ে যাই। লকডাউনে অনলাইনেও ক্লাস নিয়েছি।’

২০১১ সালে ২৮ অক্টোবর ঢাকা বিভাগে তথ্যপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণ ও দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বিশেষ অবদানের কারণে স্বর্ণপদক পান লিপি। ২০১৫ সালে ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি ফাউন্ডেশন ‘আইসিটি শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তার’ সম্মাননা স্মারক পান তিনি।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ