গত বছর আগাম আলুর বাজারদর ভালো থাকায় এ বছর দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে আবাদ করেন দিনাজপুরের চাষিরা। বেশি লাভের আশায় অনেকেই অন্যের জমি চড়া টাকায় বর্গা নিয়ে আলুর আবাদ করেন। ভেবেছিলেন ভালো দাম পেয়ে লাভের মুখ দেখবেন; কিন্তু আলুর বর্তমান বাজারদরে লাভ তো দূরে থাক, খরচও তুলতে পারছেন না তাঁরা। ফলে লোকসানের শঙ্কায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকের।
জানা যায়, প্রতিবছর নতুন আলু ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এ বছর শুরুতেই দাম ছিল অর্ধেক। প্রতি কেজি নতুন আলু ৪০-৫৫ টাকায় বিক্রি হয়। তবে বর্তমানে আলুর বাজারদর কমে রকমভেদে দাঁড়িয়েছে ৭-৯ টাকায়; যা খুচরা বাজারে ৯ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকেরা বেশি জমিতে আগাম আলু রোপণ করেন। এ বছর ১০ হাজার ২৩২ হেক্টরে আগাম আলু লাগানো হয়। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১৭ দশমিক ২৮ মেট্রিক টন। আর গড়ে প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ সাড়ে পড়ে ৭ টাকা। এ পর্যন্ত মোট আবাদের ৪০ শতাংশ জমির আলু উত্তোলন করা হয়।
চিরিরবন্দর উপজেলার আউলিয়া পুকুর গ্রামের কৃষক মোহসিন বলেন, ‘এ বছর দুই বিঘা জমিতে আগাম আলু লাগিয়েছি, বীজ, সার, শ্রমিক খরচ ও সেচ দিয়ে প্রতি বিঘা আবাদ করতে ১৫-১৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর এক বিঘা জমির আলু বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে ১৪-১৬ হাজার টাকা। এতে লাভ তো দূরে থাক, লোকসানের মুখে পড়ছি।’
একই উপজেলার বড়গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এ বছর দুই একর জমিতে আলুর আবাদ করেছি, ফলনও মোটামুটি ভালো। কিন্তু ভালো দাম না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে; যা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। সরকার যদি আলুচাষিদের দিকে না তাকায়, তাহলে আমরা আলু চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলব।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. খালেদুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত মোট আগাম আলুর মাত্র ৪০ শতাংশের মতো উত্তোলন করা হয়েছে। বর্তমানে যে বাজারদর, তাতে কাঙ্ক্ষিত লাভ তেমন হচ্ছে না। তবে সামনে দাম কিছুটা বাড়লে সে ক্ষেত্রে চাষিদের লোকসানে পড়তে হবে না।