হোম > ছাপা সংস্করণ

লাবণী এখন অন্যের অনুপ্রেরণা

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ (রংপুর)

লাবণী বেগমকে যদি প্রশ্ন করা হয়, তাঁর কয় সন্তান। এক মুহূর্ত দেরি না করে তিনি জবাব দেন, ২০ জন! ব্যক্তিগতভাবে না চিনলে যে কেউ এই জবাবে বাক্‌রুদ্ধ হয়ে পড়বেন। তবে গ্রামের লোকজন জানেন, লাবণীর এই ২০ সন্তানের মধ্যে দুজন তাঁর গর্ভের, বাকি ১৮টি সন্তান লাবণীর খামারের গাভি ও বাছুর। এসব গাভি ও বাছুরকে তিনি সন্তানের মতোই যত্ন করেন। কারণ এরাই তাঁর ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছে।

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ইকরচালী গ্রামের গৃহবধূ লাবণী। ছাব্বিশের কোটা পার করা এই নারী হার মানেননি, মাথা নত করেননি দারিদ্র্যের কাছে। বরং নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। এখন তিনি অন্যের অনুপ্রেরণা। অথচ সেই ছোটবেলা থেকেই অনটন যেন লাবণীর সঙ্গী। সাত ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। অভাবের কারণে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তাঁকে বিয়ে দেয় পরিবার। স্বামী পশ্চিম ইকরচালী গ্রামের মশিয়ার রহমান খেটে খাওয়া মানুষ। বিয়ের পরও অভাব পিছু ছাড়েনি লাবণীর। স্বামীর সংসারে ঠিকমতো দুবেলা ভাতও জুটত না একসময়।

অভাবের তাড়নায় দমে না গিয়ে সব সময়ই তাঁর ভেতর কিছু একটা করার তাগিদ কাজ করত। একসময় প্রতিদিন রান্নার চাল থেকে পাঁচ মুঠো চাল সঞ্চয় শুরু করেন। লাবণী বেগম আজকের পত্রিকাকে জানান, এক বছর পর জমানো চাল আর গলার সোনার গয়না বিক্রি করে ৮ হাজার ৮০০ টাকা পান। ওই টাকা দিয়ে ৪০টি হাঁস-মুরগি ও ছয়টি ছাগল কেনেন। ছাগল বাচ্চা দেয়, হাঁস-মুরগি দেয় ডিম। ২০১১ সালে হাঁস-মুরগি ও ছাগল বিক্রি করে কেনেন শংকর জাতের দুটি বকনা বাছুর। বছর দুয়েক পর বাছুর দুটি গাভিতে পরিণত হয়, প্রতিদিন ৩০ লিটার করে দুধ দিতে শুরু করে। এ দুধ বিক্রি করে দিনে প্রায় ৬০০ টাকা আয় হতে লাগল। গোবর দিয়ে জ্বালানি তৈরি করে বিক্রি করেও কিছু টাকা আসতে লাগল। এভাবে তিন বছরে আরও চারটি শংকর জাতের গাভি কেনেন। ছয়টি গাভি দিয়ে শুরু করেন ডেইরি খামার। এখন লাবণীর খামারে দেশি-বিদেশি গাভি মিলে মোট গরু ১৮টি। প্রতিদিন খামার থেকে গড়ে ১০০-১১০ লিটার দুধ পান। প্রতি লিটার দুধ ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করে খরচ বাদে দৈনিক ১ হাজার ৫০০ টাকা লাভ থাকে। বছরে ৩ লাখ টাকার বাছুরও বিক্রি করেন তিনি।

লাবণী জানান, খামারের আয় দিয়েই খড়ের ঘরের জায়গায় আধা পাকা টিনের বাড়ি করেছেন। কিনেছেন দুই একর আবাদি জমি। গাভির খামারও করেছেন পাকা। বাড়ির চারদিকে আম, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপেগাছ ও শাকসবজি লাগিয়েছেন। আত্মনির্ভরশীল লাবণী এখন এলাকাবাসী ও পরিবারের কাছে শ্রদ্ধা-ভালোবাসার মানুষ। তাঁকে অনুসরণ করে এলাকায় এখন অনেকেই গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগির খামার করছেন। বিশেষ করে পশ্চিম ইকরচালী গ্রামের গৃহবধূরা লাবণীর সাফল্যে স্বাবলম্বী হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন।

পশ্চিম ইকরচালী গ্রামের খাদিজা খাতুন বলেন, তিন সন্তান আর অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছিলেন। লাবণীর পরামর্শে গাভি পালন শুরু করেন। এখন তাঁর চারটি গাভি, পাঁচটি ছাগল ও হাঁস-মুরগি রয়েছে। ১৪ শতক জমিও কিনেছেন। পাশের মাঝেরহাট গ্রামের গৃহবধূ মাজেদা খাতুন জানালেন, তাঁর বিয়ে হয়েছে ১৩ বছর বয়সে। অন্যের বাড়িতে কাজ করে দিন চলত। এখন তাঁর গাভি পালনের আয়ের টাকায় স্বামী মাঝেরহাটে গোখাদ্যের দোকান দিয়েছেন। কিনেছেন ২৫ শতক জমি, করেছেন টিনের বাড়ি।

ইকরচালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দেখেছি লাবণী অমানুষিক কষ্ট করে আজকে এই জায়গায় এসেছে। গৃহবধূ লাবণীকে দেখে ইউনিয়নের অনেক নারী-পুরুষ খামার করে ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন।’ তারাগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফরহাদ নোমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লাবণীর খামার ও তাঁর কর্মকাণ্ড আমি নিজ চোখে দেখেছি। তিনি একজন দক্ষ খামারি। তাঁকে দেখে গ্রামের নারীরা গরু পালনে উৎসাহিত হচ্ছেন। এখানে উৎপাদিত দুধ এখন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অংশেও যাচ্ছে।’ 

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ