দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে তিনজন স্ট্রাইকারকে নিয়ে দেশের ফুটবলপাড়া সরগরম থাকত, তাঁদের একজন হলেন এনায়েত। অন্য দুজন সালাউদ্দিন ও হাফিজ। প্রথমজন খেলতেন বিআইডিসিতে। দ্বিতীয়জন আবাহনীতে এবং তৃতীয়জন মোহামেডান স্পোর্টিংয়ে। সে সময় এনায়েতের ক্রীড়াশৈলী দেশের ক্রীড়াপ্রেমী মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কোনো সন্দেহ নেই, বাংলাদেশের ফুটবলে যাঁদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, তাঁদের মধ্যে এনায়েত অন্যতম।
স্বাধীনতার আগে থেকেই ফুটবল খেলতেন তিনি। ১৯৭০ সালে শক্তিশালী ভিক্টোরিয়া ক্লাবের হয়ে ১৭টি গোল করেছিলেন। যুদ্ধ যখন শুরু হলো, তখন ছিলেন গ্রামের বাড়ি কালীগঞ্জে। এ সময় একদিন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে ফুটবল দল গড়ার ঘোষণা দেওয়া হলে তিনি চমকে ওঠেন। অনেক কষ্ট করে তিনি আগরতলায় গিয়ে পৌঁছান। মোহামেডানের খেলোয়াড় কায়কোবাদ এনায়েতকে আগরতলার বীরেন্দ্র ক্লাবে নিয়ে যান, সেখানে এনায়েত আগরতলা ফুটবল লিগে খেলেন। কলকাতা থেকে বাংলাদেশ ক্রীড়া সমিতির কর্মকর্তারা আগরতলায় আসেন খেলোয়াড় বাছাই করতে। আরও কয়েকজনের সঙ্গে এনায়েত মনোনীত হন। নদীয়ার কৃষ্ণনগরে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে অংশ নেয়। খেলাটি ২-২ গোলে ড্র হয়। দেশের হয়ে খেলা প্রথম ম্যাচে দলের পক্ষে যে দুটি গোল হয়, তার একটি করেছিলেন এনায়েত, অর্থাৎ স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের প্রথম খেলায় গোল করেছিলেন এনায়েত।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তুখোড় এই খেলোয়াড় বাংলাদেশ দলের হয়ে প্রথম ম্যাচে অংশ নিয়েছিলেন। মালয়েশিয়ার মারদেকা কাপে সে খেলাটি ছিল থাইল্যান্ডের বিপক্ষে। নির্ধারিত সময়ে খেলা ২-২ গোলে ড্র হয়েছিল। সুনীল কৃষ্ণ দে মাঠের ডান প্রান্ত থেকে চিপ (ক্রস) করেছিলেন। তাতে অনেক দূর থেকে দৌড়ে এসে দুর্দান্ত হেড করেছিলেন এনায়েত। গো...ল!
দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে দেশের হয়ে খেলা প্রথম ম্যাচে এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে গোল করে এনায়েত ইতিহাস গড়েছেন। এ রেকর্ড আর ভাঙার নয়।
সূত্র: দুলাল মাহমুদ, খেলার মাঠে মুক্তিযুদ্ধ, পৃষ্ঠা ৩৯৮-৩৯৯