হোম > ছাপা সংস্করণ

বজ্র আঁটুনি, ফসকা গেরো

বিভুরঞ্জন সরকার

ঢাকা শহরে কাউকে নামতে না দেওয়ার হুমকি, বিভিন্ন স্থানে পুলিশের তল্লাশিচৌকি, আওয়ামী লীগের এত পাহারার পরও বিএনপির সমাবেশে এত মানুষ কোত্থেকে এল? এই সমাবেশের পর কোন পক্ষের জয় হলো বলে মানুষ মনে করছে?

কয়েক দিন ধরে টানা উত্তেজনার পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কি ১০ ডিসেম্বর জয়-পরাজয় ভাগাভাগি করে নিল? বিএনপি গোঁ ধরেছিল নয়াপল্টনে ছাড়া অন্য কোথাও ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ করবে না। আবার সরকার ও আওয়ামী লীগের জেদ ছিল বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে বাধ্য করবে। কিন্তু দুই পক্ষই শেষ পর্যন্ত নিজ নিজ অবস্থান পরিবর্তন করেছে। বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে পারেনি, সরকার বা আওয়ামী লীগ বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিতে পারেনি। ১০ ডিসেম্বর বিএনপির বহুল আলোচিত সমাবেশ হলো গোলাপবাগ মাঠে। এই মাঠটিতে রাজনৈতিক দল আগে কখনো সমাবেশ করেছে কি না, জানা নেই। সেদিক থেকে বিএনপি একটি রেকর্ড করল। ছোট একটি মাঠে বড় সমাবেশের রেকর্ড করতে গিয়ে বিএনপিকে কম খেসারত দিতে হয়নি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ও শ চারেক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ছাড়া একজন মানুষের জীবনও গেছে।

বিএনপি নয়াপল্টন থেকে গোলাপবাগে যাওয়ায় তাদের পরাজয় হয়েছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘নয়াপল্টনে সমাবেশ আমরা করবই—এ কথা যাঁরা বলেছেন, তাঁরা এখন গোলাপবাগে। পরাজয় কার হলো? আমাদের, না বিএনপির? নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে পারেনি। আন্দোলন কর্মসূচির পরাজয় তো অর্ধেক এখানেই হয়ে গেছে।’

আওয়ামী লীগের এই নেতার বক্তব্য যদি তর্কের খাতিরে সঠিক বলেও ধরে নেওয়া যায়, তাহলেও প্রশ্ন আসে—বাকি অর্ধেক পরাজয় কি আওয়ামী লীগ বা সরকারের হলো?

আওয়ামী লীগ বা সরকার তো বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিতে চেয়েছিল। বিএনপি তাতে রাজি হয়নি। তবে ৭ ডিসেম্বর হঠাৎ পূর্বঘোষণা ছাড়া নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জমায়েত হতে গিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। মকবুল হোসেন নামে একজন গরিব মানুষের মৃত্যুও হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন অনেকে, যার মধ্যে পুলিশ সদস্যও আছেন। এরপর পুলিশ বিএনপির কার্যালয়ে প্রবেশ করে কয়েকজন নেতাসহ কয়েক শ কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। বিএনপির কার্যালয় থেকে পুলিশ ১৫৬ বস্তা চাল, সোয়া দুই লাখ বোতল পানি, রান্না করা খিচুড়ি, নগদ টাকা, ককটেল ইত্যাদি উদ্ধার করে। কেউ কেউ ভেবেছিল, বিএনপির অফিসে অনেক তেলের ড্রাম বা বোতলও পাওয়া যাবে। কারণ অভিযোগ হচ্ছে, বিএনপিকে অনেকেই তেল দিচ্ছে। কিন্তু চাল-খিচুড়ি-পানি বিএনপি কোন মতলবে দলীয় কার্যালয়ে মজুত করেছিল, সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

ওই রাতেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে তুলে নেয় পুলিশ। গ্রেপ্তারের কিছু আগেও মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, ১০ ডিসেম্বর তাঁদের সমাবেশ নয়াপল্টনেই হবে।

কিন্তু দলের দুই শীর্ষ নেতার গ্রেপ্তারের পর ঘটনা বদলাতে থাকে। সমাবেশ হওয়া না-হওয়া নিয়ে যখন কিছুটা সংশয় তৈরি হয়, তখন বিএনপি সমাবেশস্থল পরিবর্তন করে গোলাপবাগ করার সিদ্ধান্ত জানায়, পুলিশও দ্রুত এর অনুমোদন দিয়ে দেয়। গোলাপবাগে বিএনপির সমাবেশ—এটা প্রচার হওয়ার ঘণ্টা কয়েকের মধ্যেই মাঠ ভরে যায়। এই মানুষ কোথা থেকে এল? ঢাকার পথঘাট ফাঁকা ছিল। যানবাহনও ছিল কম। সবচেয়ে বড় কথা, আওয়ামী লীগ ছিল সতর্ক পাহারায়। পাড়া-মহল্লায় আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের মহড়া দেখে কারও কারও মনে হয়েছিল, বিএনপির সমাবেশ ফ্লপ হবে।

কিন্তু বিএনপির সমাবেশে লোকসমাগম কম হয়নি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ৯ ডিসেম্বর মহানগর নাট্যমঞ্চে আয়োজিত সমাবেশে বলেছিলেন, ‘আজ থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মাঠে থাকবেন। ঢাকা শহরে কাউকে নামতে দেওয়া হবে না। ২০২৪ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে আবারও বিজয়ী করার পরে আমরা ঘরে ফিরব।’

ঢাকা শহরে কাউকে নামতে না দেওয়ার হুমকি, বিভিন্ন স্থানে পুলিশের তল্লাশিচৌকি, আওয়ামী লীগের এত পাহারার পরও বিএনপির সমাবেশে এত মানুষ কোত্থেকে এল? এই সমাবেশের পর কোন পক্ষের জয় হলো বলে মানুষ মনে করছে? হুমকি-হুংকার দিয়ে কি আসলে রাজনীতির মাঠ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়?

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘কাতারে (বিশ্বকাপ ফুটবল) খেলা হবে। বাংলাদেশেও অপশক্তি, জঙ্গিবাদ, দুঃশাসন, আগুন-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে খেলা হবে। অনেক ছাড় দিয়েছি, আর ছাড় দেব না। আগুন-সন্ত্রাস করতে এলে আর ছাড়া হবে না।’

ছাড় দেওয়া না-দেওয়ার ক্ষমতা কি শুধু আওয়ামী লীগের হাতে? বিএনপির কি কিছুই করার নেই? কিছু যে দলটির করার আছে, তার প্রমাণ কি ১০ ডিসেম্বর পাওয়া গেল না?

সবকিছু দেখে কারও কারও কাছে মনে হয়েছে, সরকার ও আওয়ামী লীগের বিএনপিবিরোধী বজ্র আঁটুনি বাস্তবে ফসকা গেরোতে পরিণত হয়েছে।

লেখক: বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ