ফল প্রকাশের সময় ভ্যানে যাত্রী টানছিল এবার এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া কাওসার হোসেন আদর। ভ্যানচালক বাবা অসুস্থ থাকায় সংসারের দায়িত্ব তাকেই নিতে হয়েছে। যাত্রীকে গন্তব্যে নামিয়ে বিদ্যালয়ে গিয়ে জানতে পারে, সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। আনন্দাশ্রু ঝরে দুচোখ দিয়ে। আশঙ্কার কালো মেঘও যেন ঘিরে ধরে তাকে—কীভাবে পৌঁছাবে সে চিকিৎসক হওয়ার লক্ষ্যে।
নীলফামারীর জলঢাকা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র কাওসার। চলতি বছর সে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে জলঢাকা পৌর এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পণ্ডিতপাড়ার ভ্যানচালক অলিয়ার রহমানের ছেলে।
কাওসার জানায়, ফল প্রকাশের সময় সে একজন যাত্রী নিয়ে দূরে ছিল। যাত্রীকে নামিয়ে স্কুলে গিয়ে হেড স্যারের কাছে জানতে পারে সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। আনন্দে চোখে পানি এসে গিয়েছিল। সে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চায়। সে জন্য সবার সহযোগিতা চায় সে।
কাওসারের সহপাঠী আবু সাঈদ, লাজু ও পিংকি জানায়, তারা ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রাইভেট পড়লেও কাওসার কোনো প্রাইভেট পড়েনি। সে ক্লাসে খুব মনোযোগী ছিল।
কাওসারের বাবা অলিয়ার রহমান বলেন, ‘মুই (আমি) ভ্যানের প্যাডেল ঘুরায়ে সংসার চালাই। কয়দিন ধরি অসুস্থ। ফলে মোর বদলে বেটা (ছেলে) ভ্যান টানতেছে। হামরা (আমরা) গরিব মানুষ, দিন আনি দিন খাই। হেড স্যার কইছে, তোর বেটা ভালো ফল করিছে। হামার কি আর ওপর ক্লাসে পড়াবার সামর্থ্য আছে? যদি কেউ তার জন্য সাহায্য-সহযোগিতা করে তাহলে পড়বার পারবে। না হলে এখানেই তার পড়া শেষ।’
জলঢাকা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুর রহমান বলেন, মেধা যেমন সবার সমান নয়, তেমনি আর্থিকভাবেও সবাই সচ্ছল নয়। কাওসার খুব মেধাবী। তাকে সহযোগিতা করলে সে একদিন সবার মুখ উজ্জ্বল করবে।