‘রাতে যখন বানের পানি বাড়তে শুরু করে তখন জান বাঁচানোই ছিল ফরজ। ধান ভেসে যাক, গরু-ছাগল মইরা যাক পোলাপান তো বাইচ্ছা আছে।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের পঞ্চগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রের বসে এভাবে একে অপরের সঙ্গে কথা বলছিলেন ষাটোর্ধ্ব তিন নারী।
তাঁদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিনিধির। এ সময় আজেদা বিবি বলেন, ‘রাতে যখন ঘরের মধ্যে হু হু করে পানি ঢুকতে শুরু করে তখন আর ধানের চিন্তা করিনি। পরিবারের আট সদস্য নিয়ে জান বাঁচিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি। ঘরের আসবাবপত্রের সাথে বোরো ফসলের ৩৫ মণ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। পানি কমলে বাড়ি গিয়ে এখন কি খাব জানি না।’
দশ সদস্যের পরিবার প্রধান শেফা বেগম বললেন তাঁর দুর্দশার কথা। পশু পালন করে তাঁর পরিবার চলত। কিন্তু সেই সম্বলও আর রইল না। বন্যায় গো-খাদ্যের অভাবে দুটি গরু, দুটি ছাগল, পাঁচটি ভেড়া ও সাতটি মোরগ মরে গেছে। বাকি আরও দুটি গরু, তিনটি ছাগল ও সাত থেকে আটটি মুরগির বাচ্চা বেঁচে আছে না; কি ভেসে গেছে তা জানেন না তিনি।
অন্যদিকে সুলেনা বেগম নামের আরেক নারী বলেন, ‘বাবা রে জীবনেও এমন দিন আর কাটাইনি। তিন দিন হয়ে গেল এক কাপড়ে আছি। কাপড় নেই, গোসল নেই। এক বেলা খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি সেটাই তো বড়!’
পঞ্চগ্রাম উচ্চবিদ্যালয় প্রধান আব্দুল মোহিত বলেন, গত শুক্রবার দুপুর থেকে এ আশ্রয়কেন্দ্রে আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৬০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে এখানে আশ্রয় নেন। শুরু হয় ত্রাণের জন্য হাহাকার। এগিয়ে আসেন এলাকার প্রবাসীরা। গত মঙ্গলবার থেকে পানি কমতে শুরু করলে অনেকেই বাড়ি ফেরে যান।
এর আগে গত সোমবার সরকারের পক্ষ থেকে ওই আশ্রয় কেন্দ্রের শতাধিক পরিবারে দুই কেজি করে চাল বিতরণ করেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যরা।