একসময় পরিবারের সদস্যদের তিন বেলা খাবার জোটাতে হিমশিম খেতেন কৃষ্ট মোহন সিংহ। কৃষিকাজ করে তিন মেয়ে ও এক ছেলের ভরণপোষণসহ সাংসারিক ব্যয় বহন করা ছিল কষ্টসাধ্য। এমন অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য ১৪ বছর আগে তিনি প্রতিমা তৈরির কাজ শেখেন। এর পর তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ছেলে মিলন চন্দ্র সিংহ পড়ালেখার পাশাপাশি প্রতিমা তৈরির কাজে তাঁকে সহযোগিতা করায় সংসারে সচ্ছলতা এসেছে।
কৃষ্ট মোহন সিংহের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের বানাগাঁও গ্রামে। তাঁর ছেলে মিলন চন্দ্র সিংহ সদর উপজেলার রুহিয়া ডিগ্রি কলেজে স্নাতক (পাস কোর্স) চূড়ান্ত পর্বে পড়াশোনা করছেন।
হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় উৎসবে এলাকার মন্দিরগুলোতে প্রতিমা তৈরির কাজ করেন মোহন ও তাঁর ছেলে মিলন। বাবা-ছেলে যৌথভাবে প্রতিমা তৈরি করে প্রতিবছর কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা আয় করেন। তাঁদের পরিবারে কৃষিকাজের পরিধি বেড়েছে। ভালো ঘরে তিন মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন মোহন।
গতকাল শনিবার ধনতলা ইউনিয়ন পরিষদের পেছনে দলুয়া সর্বজনীন দুর্গামন্দিরে প্রতিমা তৈরি কাজ করার সময় কথা হয় বাবা-ছেলের সঙ্গে। মোহন বলেন, ‘প্রতিমা তৈরির কাজ শেখার পর স্থানীয় মন্দিরগুলোর কাজ পাওয়া শুরু হয়। এর পর থেকে আর কাজের অভাব হয়নি। দুর্গাপূজা, কালীপূজা, সরস্বতী পূজাসহ হিন্দুদের বিভিন্ন পূজার জন্য প্রতিমা তৈরি করি। সাত বছর হলো ছেলেও কাজ করছে আমার সঙ্গে। এখন অনেকটাই সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে দিন পার করছি।’
মিলন বলেন, ‘বাবা একা কাজ করে সংসার পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি এখন বাবার সঙ্গে কাজ করি। প্রতিমা তৈরি করে একদিকে যেমন আনন্দ পাই। অন্যদিকে প্রতিবছরে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা আয় হয়। বোনদের ভালো ঘরে পাত্রস্থ করতে পেরেছি।’
খুব অল্প পারিশ্রমিকে প্রতিমা তৈরি করে দেন জানিয়ে মিলন ও তাঁর বাবা বলেন, ‘আমরা গ্রামের মন্দিরগুলোতে যে প্রতিমা ২০ হাজার টাকা তৈরি করে দিই, শহরে একই প্রতিমা তৈরিতে শিল্পীরা ৫০-৬০ হাজার টাকা পারিশ্রমিক নেন। আমাদের ইচ্ছে শহরের বড় বড় মন্দিরগুলোতে কাজ করার।’
দলুয়া সর্বজনীন মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রতন কুমার সিংহ বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে বাবা-ছেলের কাছে প্রতিমা তৈরি করিয়ে নিয়ে আমরা পূজা করি। স্থানীয় শিল্পী হিসেবে অর্ধেক পারিশ্রমিকেই এই কাজ করে দেন তাঁরা।’
ধনতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সমর চ্যাটার্জি নূপুর বলেন, ‘প্রতিমা তৈরিতে বাবা-ছেলের বেশ সুনাম রয়েছে এলাকায়। তাঁদের এই প্রতিভা ছড়িয়ে পড়ুক, এটাই আমরা চাই।’