বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আসন যেখানে সোনার হরিণ, সেখানে সুযোগ পেয়েও টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছেন না বদরগঞ্জের শাহীন আলম। উচ্চশিক্ষা নেওয়ার স্বপ্ন ফিকে হতে বসেছে এই অদম্য মেধাবীর।
শাহীন ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে ব্যয়ভার বহনের সাধ্য না থাকায় পড়াশোনা চালাতে পারেননি। এবার রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সি ইউনিটে ৬৮তম হয়েছেন। এখন ভর্তির সময় কাছাকাছি চলে এলেও প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে পারেননি।
বদরগঞ্জের বুজরুক বাগবাড় গ্রামের বাসিন্দা শাহীনের বাবা তাছির উদ্দিন ভ্যানচালক। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে বোনের বিয়ে হয়েছে গত বছর। নিজেদের আবাদি জমি নেই। এমনকি বাড়িটিও অন্যের জায়গায়।
বেরোবির জনসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আলীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির তারিখ ৯ থেকে ১১ জানুয়ারি। ভর্তির জন্য সব মিলিয়ে ১০ হাজার টাকা লাগবে।
শাহীন দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেই ছোটবেলা থেকে পড়াশোনা করেছেন। তিনি স্থানীয় নুরুল হুদা উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং রংপুর সরকারি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় টিউশনি করে নিজের খরচ নিজে চালিয়েছেন। এখন উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন হাতের নাগালে পেয়েও অর্থাভাবে ফসকে যেতে বসেছে।
শাহিন বলেন, ‘আমার পরিবারের পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়। আগে নিজের খরচ নিজে চালিয়ে পড়াশোনা করতে পারলেও ভর্তির জন্য টাকার ব্যবস্থা করতে পারি নাই। উচ্চশিক্ষা মনে হয় আমার কপালেই নেই।’
বাবা তাছির উদ্দিন বলেন, ‘ছইলটা অনেক কষ্ট করি পড়াশোনা করছে। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাইছে। কিন্তু এখন নাকি ভারসিটিত ভত্তি হইবে। মেলায় টাকা নাগবে। মুই গরিব মানুষ অত টাকা কোনটে পাইম? মোর ব্যাটাটার বুঝি আর পড়াশোনা হয় না।’
শাহীন জানান, গত বছর ভর্তি পরীক্ষার সময় এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তাঁর বাবা। ভর্তি পরীক্ষা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কাজে সে টাকা খরচ হয়ে গেছে। এই ঋণ এখনও শোধ হয়নি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মাজেদুর রহমান বলেন, ‘শাহীন ছেলেটা মেধাবী। ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া চালিয়ে আসছে। সুযোগ পেলে সে অনেক দূর যেতে পারবে।’