যশোর মেডিকেল কলেজে (যমেক) হাসপাতাল নির্মাণের দাবিতে যশোর-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ । গতকাল শনিবার সকালে মেডিকেল কলেজের সামনে যশোর-খুলনা মহাসড়কে অবস্থান কর্মসূচিতে কয়েক শ মানুষ অংশ নেন। এর কারণে এক ঘণ্টা ধরে সড়কটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে আন্দোলনকারীরা সড়ক ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে তাঁরা সড়কের পাশে অবস্থান নিয়ে গণসংগীত পরিবেশন ও মানববন্ধন করেন। কর্মসূচিতে নানা শ্রেণি-পেশা ও সংগঠনের মানুষ অংশ নেন।
যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক ফারাজী সাঈদ আহমেদ বুলবুল বলেন, ‘আমরা মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। তারই ধারাবাহিকতায় আজ (শনিবার) মেডিকেল কলেজের সামনে যশোর-খুলনা মহাসড়কে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করি। একপর্যায়ে দাবি বাস্তবায়ন চেয়ে কয়েক শ সাধারণ মানুষ রাজপথে নেমে আসে। এ সময় যশোর-খুলনা মহাসড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।’
যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির সদস্যসচিব জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, ‘এক যুগ পার হতে চললেও যশোর মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল নির্মাণ হয়নি। অথচ সাতক্ষীরা ও কুষ্টিয়াতে পরে কলেজ স্থাপিত হয়েও, সেখানে হাসপাতাল নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু ভৌগোলিক কারণে ওই দুই হাসপাতালের থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল এখানকারটি। কেননা, এখানে যশোর ছাড়াও নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ, এমনকি মেহেরপুরের রোগীরাও চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন।’
সদস্যসচিব জিল্লুর রহমান ভিটু আরও বলেন, ‘মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল নির্মাণ না হওয়ায় খুবই স্বল্প পরিসরের মধ্যে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তাঁদের বসার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ৩-৪ কিলোমিটার দূর থেকে দিনে-রাতে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও ক্লাস করার জন্য সদর হাসপাতালে আসতে হয়। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন নিরাপত্তা শঙ্কায় থাকেন, তেমনি তাদের মূল্যবান সময়ের অপচয়ও হয়।’
যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা এত দিন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে এসেছি, কিন্তু যশোরের সাংসদসহ জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি আমলে নেননি। ফলে সরকারও বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক তথ্য পায়নি। যে কারণে এক যুগ পার হতে চললেও আজও হাসপাতাল পাইনি আমরা।’
আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা গণস্বাক্ষর কর্মসূচি গ্রহণ করেছি, যা সম্পন্ন হলে আমাদের দাবি প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো হবে। এর মধ্যেও যদি হাসপাতাল নির্মাণকাজের বাস্তবায়ন শুরু না হয়, সে ক্ষেত্রে যশোর অবরোধের মতো বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন যশোর সদর হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ও যশোর ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ লিটু, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, যশোর আইনজীবী সমিতির সভাপতি শরীফ নূর মোহাম্মদ রেজা, যশোর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি হারুন-অর-রশিদ, বাসদ নেতা হাসিনুর রহমান, যশোর কলেজের অধ্যক্ষ মুস্তাক হোসেন শিম্বা, মেডিকেল কলেজ স্থাপনের আন্দোলনের নেতা মাস্টার হাফিজুর রহমান, চাঁচড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ফুল, মেডিকেল কলেজের জমি দানকারী শরাফত আলী, চাঁচড়ার নেতা আহসান উল্লাহ ময়না, জেলা আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ, নওরোজ আলম খান চপল, দিপঙ্কর বিশ্বাস, সুজন দত্ত লালটু প্রমুখ।
অবস্থান কর্মসূচি শেষে গণসংগীত পরিবেশন করে উদীচী, পুনশ্চ ও বাউলিয়া সংঘ যশোরের শিল্পীরা।