হোম > ছাপা সংস্করণ

দিনমজুরি করেও পেল জিপিএ-৫

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ

অভাবের সংসারে সহায়তার জন্য তিনজনকেই করতে হয় দিনমজুরের কাজ। তারপরও পড়াশোনা চালিয়ে গেছে। এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পেয়েছে জিপিএ-৫। এই তিন অদম্য মেধাবী কিশোর হলো তারাগঞ্জের ডাংগীরহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজের রনি মিয়া, সাকিবুল হাসান ও ছামিউল ইসলাম।

রনি প্রথম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবাকে হারায়। এরপর মা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ঠাঁই হয় নানার বাড়িতে। তৃতীয় শ্রেণিতে উঠতেই দিনমজুর নানা বদিউজ্জামান সরকারও মারা যান। এরপর অকুল পাথরে পরে রনির পরিবার। সংসার ও লেখাপড়ার খরচ চালাতে ছোট বেলা থেকেই মায়ের সঙ্গে অন্যের খেতে দিনমজুরি শুরু করে রনি।

রনির বাড়ি উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের কিসামত মেনানগর কাচারীপাড়া গ্রামে। রনির মা নুরনাহার বেগম বলেন, ‘মানুষের বাড়িতে কাজ করে ছেলেটা গ্রামের স্কুলে লেখাপড়া শিখছে। মানুষ বলতেছে রনি প্লাস পাইছে। এটা খুব ভালো রেজাল্ট। কিন্তু রনিকে আর পড়ানোর মতো সামর্থ্য আমার নেই। ছেলেটার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। জানি না সেটা পূরণ হবে কি না।’

রনি বলে, ‘ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়েছি। এখন মা অসুস্থ। সংসার ও লেখাপড়ার খরচ চালাতে এত দিন অন্যের বাড়িতে কাজ করেছি। আমার স্বপ্ন ডাক্তার হব। কিন্তু পেটের ভাত জোগাড় করতে পারছি না। সেখানে ডাক্তার হবার স্বপ্ন কতটা বাস্তবায়ন হবে তা আল্লাহই জানেন।’

সাকিবুলের বাড়ি কিসামত মেনানগর আদাহিন্নাপাড়া গ্রামে। তাঁদের সম্বল বলতে পাঁচ শতক জমির বসতভিটা। তিন ভাইবোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। বয়সের ভারে ন্যুব্জ দিনমজুর বাবা হাবিবুল্যাহ প্রামাণিকের একার আয়ে সংসারে দুবেলা ভাতই জোটে না ঠিকমতো, সেখানে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ দেওয়া দুরূহ। তাই নিজের খরচ ও সংসারে সহায়তার জন্য সাকিবুল কখনো বাবার সঙ্গে দিনমজুরি আবার কখনো রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে।

সাকিবুলের মা সামসুন্নাহার বলেন, ‘বেটাটা ভালো এজাল (ফল) করছে। ভালো কলেজোত ভর্তি করার নাগবে। কিন্তু ওর বাপ যে কামাই করে তাক দিয়া পেটের ভাতে জোটে না। ছাওয়া ভালো এজাল করলে হইবে? টাকা পাইসা তো নাই।’

সাকিবুল বলেন, ‘টাকা না থাকায় বড় বোনের লেখাপড়া থেমে গেছে। লেখাপড়ার খরচ জোগাতে আমাকে দিনমজুরির কাজ করতে হয়েছে। আমার ইচ্ছা পড়ালেখা করে চিকিৎসক হব। কিন্তু অভাবের সংসারে সেটা কি সম্ভব?’

কিসামত মেনানগর পঞ্চায়েতপাড়া গ্রামের ছামিউলের দিনমজুর বাবা কুদ্দুছ আলী তিন বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় কোমরে আঘাত পান। সেই থেকে আগের মতো কাজ করতে পারেন না। মা ছালেহা বেগমের কাজে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনোরকমে ছয় সদস্যের সংসার চলে। আর নিজের ও ছোট দুই বোনের পড়াশোনার খরচ ছামিউল চালাচ্ছে দিনমজুরি করে।

বাবা কুদ্দুছ আলী বলেন, ‘চার শতক বসতভিটা ছাড়া কোনো সহায় সম্পদ নাই। সবাই কয়ছে, ছেলেটা অনেক ভালো রেজাল্ট করছে, ছেলেটাক ভালো করি পড়ান। ছেলেটারও খুব ইচ্ছা পড়ালেখা করি ডাক্তার হবার। মুই নিরুপায়। অক পড়ার সামর্থ্য মোর নাই। কয়দিন থাকি বাড়ির এক শতক জায়গা বেচার চাওছুন, গাহাক পাওছুন না।’

ছামিউল বলে, ‘এত দিন দিনমজুরি করে আমার ও বোনদের খাতা-কলম, প্রাইভেটের টাকা জুগিয়েছি। আমি চিকিৎসক হতে চাই, মানুষের সেবা করতে চাই। আল্লাহ যেন আমার এই স্বপ্ন পূরণ করেন।’

ডাংগীরহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম জানান, রনি, সাকিবুল ও ছামিউলদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা একেবারেই সংকটাপন্ন। তবু তারা দারিদ্র্যের কাছে হার মানেনি। অন্যের বাড়িতে কাজ করে জিপিএ-৫ পেয়ে প্রতিষ্ঠানের মুখ উজ্জ্বল করেছে। সহযোগিতা পেলে তারা ভালো কিছু করবে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ