২০২১ সালের শুরুটা হলিউডের জন্য ছিল আশঙ্কার। করোনার কারণে ইন্ডাস্ট্রির অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল তথৈবচ। তবে শেষটায় জমে গেছে হলিউড। একদিকে ছিল বড় বাজেটের একের পর এক ছবির মুক্তি, অন্যদিকে হলমুখী ব্যবসাও দেখেছে আলোর মুখ। আর কথায় তো আছেই, শেষ ভালো যার, সব ভালো তার!
বছরের শেষটায় হলিউডের প্রথাগত ব্যবসা আলোর মুখ দেখেছে মূলত স্পাইডারম্যানের সৌজন্যে। এই ডিসেম্বরে মুক্তি পাওয়া ‘স্পাইডারম্যান: নো ওয়ে হোম’ ছবির আয় এরই মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বক্স অফিস-সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, বিশ্বব্যাপী এই ছবির আয় আরও বাড়বে।
ডিসেম্বরের শেষ দিকে মুক্তি পেয়েছে ‘দ্য ম্যাট্রিক্স রেজারেকশনস’। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন পর ম্যাট্রিক্স ফ্র্যাঞ্চাইজি দিয়ে বড় পর্দায় ফিরলেন কিয়ানু রিভস। স্বাভাবিকভাবেই সাই-ফাই ছবির দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে ছবিটি। এরই মধ্যে টিকিট বেচে কোটিখানেক ডলার আয়ও করে ফেলেছে ‘দ্য ম্যাট্রিক্স রেজারেকশনস’। কিছুদিন পর বোঝা যাবে আসলেই বক্স অফিসে কতটুকু সাড়া ফেলতে পেরেছে ছবিটি।
রমরমা স্ট্রিমিং যুদ্ধ
শেষটায় সুখের ঝাপটা থাকলেও ২০২১ সালের শুরুর দিকে হলিউডকে করোনাকালীন রূঢ় চেহারা সামলাতে হয়েছে। স্ট্রিমিং নাকি হলকেন্দ্রিক ব্যবসা—সেই প্রশ্ন উঠেছে জোরেশোরে। হলিউডের বড় বড় স্টুডিও এবং সিনেমা প্রদর্শকগোষ্ঠী ২০২০ সাল থেকেই বুঝতে পেরেছিল যে তাদের একাধিপত্য আর থাকছে না। করোনা-সংশ্লিষ্ট বিধিনিষেধের কারণে হলব্যবসা সঙিন হয়ে উঠেছিল। আর তারই ফাঁকে রমরমা হয়ে ওঠে স্ট্রিমিং ব্যবসা। বাজারে থাকা নেটফ্লিক্স, ডিজনি প্লাস, আমাজন প্রাইম, অ্যাপল টিভি প্লাস ইত্যাদির মধ্যে দেখা দেয় ‘স্ট্রিমিং ওয়ার’।
নেটফ্লিক্স এ বছরই গ্রাহকের সংখ্যা ২১৪ মিলিয়নে নিয়ে গেছে। স্ট্রিমিং কনটেন্টে বিনিয়োগ বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। দর্শকপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠছে ‘স্কুইড গেম’ বা ‘মানি হেইস্ট’—এর নিত্যনতুন পর্ব। অস্কার, এমিসহ পুরস্কারের বিভিন্ন আসরেও স্ট্রিমিং কনটেন্টের জয়জয়কার দেখা যাচ্ছে। ডিজনির মতো বড় বড় স্টুডিও স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে ব্যবসার দিকে ঝুঁকেতে শুরু করেছে।
মন কষাকষি
কথায় আছে, ‘অর্থই সব অনর্থের মূল’। স্ট্রিমিংয়ে এখন যেহেতু অর্থের ছড়াছড়ি, তাই বিতর্কও দেখা দিচ্ছে। এই যেমন—‘ব্ল্যাক উইডো’ নিয়ে স্কারলেট জোহানসনের সঙ্গে ডিজনির মন কষাকষি, যা গড়িয়েছিল আদালত পর্যন্ত। আবার সেট ডিজাইনার ও ক্রুসহ হলিউডের কলাকুশলীরাও ২০২১-এ প্রায় ধর্মঘটে চলে গিয়েছিলেন। এর অন্যতম কারণ হলো—স্ট্রিমিং কনটেন্ট তৈরিতে জোয়ার এলেও সেই সুবিধা পাচ্ছেন না কনটেন্ট তৈরির পেছনে থাকা কলাকুশলীরা। বাড়তি মজুরির দাবিতেই তাই প্রতিবাদে নামতে হয় তাঁদের।
ওদিকে হলিউডের বিনোদন ব্যবসার ‘মহাজন’ পাল্টে যাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে ২০২১ সালে। একদিকে জোট বেঁধেছে আমাজন ও এমজিএম। অন্যদিকে মিলে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এটিঅ্যান্ডটি ও ওয়ার্নারমিডিয়া। এর ফলে ডিসকভারির সঙ্গে এক হয়ে যাবে এইচবিও ও ওয়ার্নার ব্রস। সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকেরা বলছেন, এতে করে হলিউডের কনটেন্টের পুরো বাজারেই ওলট-পালট হতে পারে।
সব মিলিয়ে বলাই যায়, হলিউডে ২০২১-এর শুরু আর শেষে বেজায় অমিল। সেই অমিলে অবশ্য অখুশি নয় হলিউড। বরং পুরো চলচ্চিত্রশিল্প এই জ্বালানিতে আরও কিছু দূর দৌড়ানোর স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু সেই স্বস্তিকে অস্বস্তিতে পরিণত করতে হাজির হয়েছে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন। এরই মধ্যে ইউরোপ-আমেরিকায় দাপট দেখানো শুরু করেছে এটি। বিশ্লেষকদের অনুমান, যদি এভাবেই চলে, তবে হয়তো আবার হলিউডের মাটিতে প্রাধান্য বিস্তার করবে স্ট্রিমিং যুদ্ধ। সেই হিসাব মাথায় রেখেই বরং চোখ মেলা যাক নতুন বছরে।
তথ্যসূত্র: দ্য হলিউড রিপোর্টার, ভ্যারাইটি, লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস, ডেডলাইন ডটকম, আইএমডিবি, সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান ও দ্য নিউইয়র্ক টাইমস
সালতামামির অন্যান্য আয়োজন: