সকাল থেকে গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ট্রফি ঘিরে উন্মাদনা। ক্রিকেটারদের মতো ট্রফির সঙ্গে ছবি তুললেন বিসিবির কর্তারাও। ফটোসেশনে ছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। তবে গতকাল মিরপুরে তাঁর উপস্থিতির আরও একটা বিশেষ কারণ ছিল—বিসিবির পরিচালনা পরিষদের জরুরি সভা। যে সভায় একটাই অ্যাজেন্ডা: কে হবেন নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক।
সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুসকে আসতে দেখেই বোঝা গেল, আসল ঘোষণা এখনই নয়। এই ঘোষণা আসলে বিসিবি সভাপতি পাপন ছাড়া আর কারও দেওয়ার কথাও নয়। জালাল জানালেন, জরুরি বৈঠকে সবার সম্মতিতে অধিনায়কের নাম চূড়ান্ত করার বিষয়টি তাঁরা ছেড়ে দিয়েছেন বিসিবি সভাপতির হাতে। এখন পাপন কথা বলবেন অধিনায়ক হওয়ার দৌড়ে থাকা সাকিব আল হাসান, লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে। তাঁদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা সেরে ১২ আগস্টের আগেই ওয়ানডে অধিনায়ক চূড়ান্ত করে দল ঘোষণা করে দেবে বিসিবি। জালাল বললেন, ‘আমরা সবাই বোর্ড সভাপতিকে অধিনায়ক নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি এখন ভেবেচিন্তে যে কজন সম্ভাব্য প্রার্থী আছে, তাদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত করবেন। আশা করি, আমরা ২-৩ দিনের মধ্যে, ১২ সেপ্টেম্বর (আসলে আগস্ট) আমাদের ডেডলাইন (এশিয়া কাপের দল জমা দেওয়ার) আছে, তার আগে আমরা অধিনায়ক নির্বাচন করে ফেলতে পারব।’
অধিনায়ক যখন চূড়ান্তই করা যায়নি, তবে এই জরুরি সভায় কী এত আলোচনা হলো? গত বৃহস্পতিবার তামিম ইকবাল অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর এই চার দিনে সাকিব কিংবা বাকি দুজনের সঙ্গে কি কোনো আলাপই করেনি বিসিবি? ঘুরেফিরে টানা একই প্রশ্নে জালাল ইউনুস মাঝে একটু খেই হারিয়ে ফেললেন। পরে একাধিক সূত্রে জানা গেল, তামিম অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর গত কয়েক দিনে নেতৃত্বের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা সাকিবের সঙ্গে কোনো আলোচনাই হয়নি বিসিবির। কেন কথা হয়নি, জালালের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে থাকা বিসিবির মিডিয়া বিভাগের প্রধান তানভীর আহমেদ টিটু আজকের পত্রিকাকে বললেন, ‘আমাদের গঠনতন্ত্রে (ধারা ১৪.১-ব) আছে, অধিনায়ক নির্বাচন হবে পরিচালনা পরিষদের মাধ্যমে। অধিনায়ক চূড়ান্ত হওয়ার ব্যাপারটি নিয়ে তাই আলোচনা হয় বোর্ড মিটিংয়ে। আজ (কাল) জরুরি সভায় সম্ভাব্য নামগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এরপরের প্রক্রিয়া যেটা আছে, সেটা হয়তো আজ-কালের মধ্যে হয়ে যাবে। বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে কথা না বলে আগেই তো কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গে আলোচনা করা যায় না। ধরুন, সাকিব বা কারও সঙ্গে কথা হলো। এখন বোর্ড মিটিংয়ে যদি কারও কোনো আপত্তি আসত, তখন আবার আরেক পরিস্থিতি তৈরি হতো। আগে বোর্ডে আলোচনা, এরপর খেলোয়াড়ের সঙ্গে আলোচনা।’
সাকিব ও লিটন এখন দেশের বাইরে। দেশে থাকলে তাঁদের হয়তো গতকালই ডাক পড়ত বিসিবিতে। সামনাসামনি আলোচনা করতে পারলে কালই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যেতে পারত বিসিবি। বোর্ড সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অধিনায়ক হিসেবে অধিকাংশ পরিচালকের পছন্দ অনুমিতভাবেই সাকিব। কিন্তু পছন্দ হলেই হচ্ছে না। এখানে সাকিবের রাজি হওয়ার ব্যাপার আছে। সংক্ষিপ্ত নাকি লম্বা মেয়াদে; শুধু সাদা বল সাকিবকে দিয়ে, টেস্টে লিটন নাকি তিন ফরম্যাটেই সাকিব অধিনায়কত্ব করবেন—অনেক বিষয় চলে আসছে।
শুক্রবারের মধ্যে অধিনায়ক চূড়ান্ত করে এশিয়া কাপের জন্য ২২ সদস্যের একটি দল ঘোষণা করবে বিসিবি। যেহেতু এই দলটাই পরে বিশ্বকাপের দল হবে, তামিমও থাকবেন এই স্কোয়াডে। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ? সন্ধ্যায় বিসিবি কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় জালাল মুচকি হেসে বললেন, ‘নির্বাচকদের জিজ্ঞেস করুন।’