মৌসুমের শেষ দিকে আর্জেন্টাইন তারকা আনহেল দি মারিয়ার প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি) ছাড়ার খবরটি সামনে আসে। তবে তাঁর পরবর্তী গন্তব্য কোথায় হবে তা নিয়ে ছিল জল্পনা-কল্পনা। সাম্প্রতিক খবর হচ্ছে, বার্সেলোনায় আসতে চাচ্ছেন দি মারিয়া। শেষ পর্যন্ত এই খবর সত্যি হলে দলবদলে এটি বড় ঘটনা হবে। রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনার ঐতিহাসিক দ্বৈরথে একই খেলোয়াড়ের দুই ক্লাবের হয়ে খেলাকে রীতিমতো ‘অপরাধ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর আগেও দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবে খেলতে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছিল লুইস ফিগোর মতো কিংবদন্তিকে। তেমনই কিছু আলোচিত খেলোয়াড়ের রিয়াল-বার্সা দলবদল নিয়ে এই আয়োজন।
লুইস ফিগো, পর্তুগাল
সে সময় বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়দের একজন ছিলেন লুইস ফিগো। ২০০০ সালের গ্রীষ্মে বার্সেলোনা সমর্থকদের হতাশ করে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন ফিগো। সে বছরই ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন তিনি। তবে এই পর্তুগিজ কিংবদন্তির দলবদলকে সহজভাবে নিতে পারেননি বার্সা সমর্থকেরা। ন্যু ক্যাম্পে খেলতে এসে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছিল তাঁকে। ফিগো যতক্ষণ মাঠে ছিলেন শুনতে হয়েছে দুয়ো। শুধু এটুকুই নয়, ফিগোকে উদ্দেশ করে ছুড়ে মারা হয় পয়সা থেকে শুরু করে শুয়োরের মাথা পর্যন্ত। এসব বিদ্রুপ সত্ত্বেও রিয়ালের হয়ে সাফল্য পেয়েছিলেন ফিগো। রিয়ালের হয়ে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগ দুটোই জিতেছিলেন তিনি।
রোনালদো, ব্রাজিল
রোনালদো নাজারিও সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলারদের একজন। ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী এই তারকা খেলেছেন রিয়াল-বার্সা দুই ক্লাবের হয়ে। তবে ফিগোর মতো সরাসরি এক ক্লাব থেকে আরেক ক্লাবে যাননি তিনি। ১৯৯৬-৯৭ সালে ইন্টার মিলানে যাওয়ার আগে এক মৌসুম বার্সেলোনার হয়ে খেলেছিলেন রোনালদো। এই এক মৌসুমে ৪৯ ম্যাচে ৪৭ গোল করেছিলেন ‘দ্য ফেনোমেনন’ খ্যাত এই স্ট্রাইকার। ২০০২ সালে ফের স্পেনে ফেরেন রোনালদো। তবে এবার ন্যু ক্যাম্পে নয়, রোনালদো ফেরেন সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবে খেলেও আশ্চর্যজনকভাবে তেমন ঘৃণার মুখে পড়তে হয়নি রোনালদোকে।
স্যামুয়েল ইতো, ক্যামেরুন
কিংবদন্তি ফরোয়ার্ড স্যামুয়েল ইতো শুরুটা করেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের একাডেমি থেকে। তবে রিয়ালে সেভাবে থিতু হওয়ার সুযোগ পাননি তিনি। অনেক ক্লাব ঘুরে শেষ পর্যন্ত থিতু হন রিয়ালের প্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনায়। ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ন্যু ক্যাম্পের ক্লাবে খেলে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান ইতো। বার্সার হয়ে ১৩০ গোল করার পথে তিনটি লা লিগা শিরোপাসহ দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতেন এই তারকা ফুটবলার।
লুইস এনরিকে, স্পেন
রিয়াল ও বার্সার হয়ে দুই শতাধিক ম্যাচ খেলেছেন স্পেন দলের বর্তমান কোচ লুইস এনরিকে। রিয়ালের হয়ে পাঁচ বছরে তিনটি শিরোপা জেতেন এনরিকে। ১৯৯৬ সালে অভিমান নিয়েই রিয়াল ছেড়ে বার্সায় যোগ দেন এনরিকে। শুরুতে তাঁর আগমনকে সন্দেহের চোখে দেখেছিলেন বার্সা সমর্থকেরা। তবে এল ক্ল্যাসিকোতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে গোল করে দ্রুত সমর্থকদের মন জিতে নেন তিনি। শুধু খেলোয়াড় হিসেবে নন, পরে কোচ হিসেবেও বার্সাকে দারুণ সাফল্য এনে দেন এনরিকে।
ডি স্টেফানো, আর্জেন্টিনা
স্পেন, আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া তিন দেশের হয়ে খেলা আলফ্রেডো ডি স্টেফানো ক্লাব ফুটবলেও দুই ভাগে ভাগ হওয়ার পথে ছিলেন। তাঁকে দলে পেতে নাকি লড়াইয়ে ছিল রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা দুই ক্লাবই। বলা হয়, বার্সার মুখ থেকে ডি স্টেফানোকে কেড়ে নিয়েছিল রিয়াল। একটা পর্যায়ে স্প্যানিশ এফএ সিদ্ধান্ত নেয়, এক মৌসুমে এক ক্লাবের হয়ে খেলবেন তিনি। এরপর স্টেফানো বার্সেলোনার হয়ে অনুশীলন শুরু করেছিলেন ও কিছু প্রীতি ম্যাচও নাকি খেলেছিলেন। পরবর্তীতে বার্সা রিয়ালের কাছে স্টেফানোর অংশীদারত্ব বিক্রি করে দেয়।