রবীন্দ্রনাথের বিশাল ঔজ্জ্বল্যের কারণে ঠাকুর পরিবারের বড় বড় প্রতিভার দিকে নজর পড়েনি আমাদের। সে রকমই একজন হলেন গগনেন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের ভাই গুণেন্দ্রনাথ আর সৌদামিনী দেবীর ছেলে গগন। হতে চেয়েছিলেন সংগীতশিল্পী। সাহেব মাস্টার রেখে সুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন। হরেক রকম বাদ্যযন্ত্রও কিনে আনতেন। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা পাল্টে দিয়েছিল তাঁর জীবন।
প্রতিবছর গরম পড়লে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে ফাঁকা কোনো জায়গায় বাড়ি ভাড়া করে মাস তিন-চার থাকতেন ঠাকুরবাড়ির সদস্যরা। গগন ঠাকুর তাঁর পরিবার নিয়ে উঠেছিলেন সার্কুলার রোডের একটি বাড়িতে। বাড়িওয়ালা বলে দিয়েছিলেন, সব ঘরেই যাওয়া যাবে, কিন্তু একটি তালাবদ্ধ ঘর খুলতে মানা। কিন্তু বাড়িওয়ালার কথা রাখেননি গগনরা। অবন ঠাকুরের মেয়ে আর জামাতা নেলি ও নির্মল এলেন সে বাড়িতে। গগনের স্ত্রী প্রমোদকুমারী সেই বদ্ধ ঘরের তালা খুলে তাঁদের থাকতে দিলেন।
এ ঘটনার সঙ্গে সম্পর্ক আছে কি না, কে জানে, সে সময় গগনের ছেলে গেহেন্দ্র পড়লেন কঠিন অসুখে। টাইফয়েড আর সারল না। মারা গেলেন গেহেন্দ্র।
গগন হয়ে গেলেন পাথুরে মূর্তি। কিছুই ভালো লাগে না তাঁর। দীনেশচন্দ্র সেন গগনেন্দ্রর ছেলে কনককে পড়াতেন। তাঁকে ডেকে একদিন গগনেন্দ্র বললেন, ‘এভাবে থাকলে আমি পাগল হয়ে যাব।’
ক্ষেত্র চূড়ামণিকে নিয়ে এলেন দীনেশচন্দ্র সেন। গগনকে কথকতা শুনিয়ে মন ভালো করার জন্য। পুত্রশোক একটু একটু করে কাটতে লাগল। গগনেন্দ্র হাতে তুলে নিলেন কাগজ-পেনসিল-কালি! ছবি হয়ে উঠল গগনেন্দ্রের বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা।
ব্যঙ্গচিত্রের জন্যই গগনের কথা মনে পড়ে সবার আগে। জাতীয়তাবাদী মনোভাব তাঁকে তাড়িত করেছে। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর আঁকা ব্যঙ্গচিত্রের কথা অনেকেরই মনে পড়ে যাবে। সেখানে বর্ধমানের রাজার সিআইই উপাধি গ্রহণের বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছিলেন তিনি। পুচ্ছ পরিবর্তন, রবীন্দ্রনাথের বিদেশভ্রমণ, জাতপাতের কালি, রূপান্তর, মোহনবাগান ক্লাবসহ অসংখ্য ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছেন তিনি।
সূত্র: হিস্ট্রিক্লাসরুম ডট কম