পীরগঞ্জের বড় করিমপুর কসবা গ্রামের মাঝিপাড়ায় হামলার শিকার হিন্দু সম্প্রদায়ের ২৪ পরিবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। ক্ষতিগ্রস্তরা ভাঙচুর ও আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়িঘর নতুন করে তৈরি ও মেরামত শুরু করেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিরোদা রানী রায় উপস্থিত থেকে বাড়িঘর নির্মাণ এবং পোড়া বাড়িগুলো পরিষ্কারের কাজ তদারকি করেন। মাঝিপাড়ায় চালানো হামলায় ২৪ পরিবারের ৩১টি ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর ৫৯টি ঘরে লুটপাটের পর ভাঙচুর করা হয়।
গতকাল ক্ষতিগ্রস্ত পল্লিতে ঢুকে দেখা যায়, বাড়ি সংস্কারে কাজ করছেন সুবর্ণ চন্দ্র ও তাঁর ছেলে সুদাসন চন্দ্র। এ সময় সুদাসনের স্ত্রী পুতুল রানী বলেন, ‘ঢাকাত থাকি ছাত্ররা আসি হামাক টিন আর ১০ হাজার ট্যাকা দিচে। সেগ্লা দিয়া নয়া করি ঘর বানাওছি।’
পুতুলের পাশে থাকা তাঁর শাশুড়ি শহিবা রানী জানান, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী তাঁদের তিন বান্ডিল টিন আর ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। তাঁরা শুক্রবার থেকে ঘর তৈরির মিস্ত্রি নিয়োগ দেবেন।
সাম্প্রদায়িক ওই হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত একজন হলেন ননী গোপাল। তিনি বলেন, ‘আমার চারটি আধা পাকা ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়ায় আমাদের পরনের কাপড় ছাড়া ঘরের সব জিনিস পুড়ে যায়। কিচ্ছু বের করতে পারিনি। যখন ওরা (হামলাকারীরা) আমাদের বাড়িতে আগুন লাগায়, তখন আমরা বাড়ির পাশে ধানের জমিতে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে লুকিয়ে ছিলাম।’
ইউএনও বিরোদা রানী বলেন, ‘কসবা হিন্দুপল্লিতে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকারিভাবে সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। ঘর মেরামতের কাজ চলছে। সেই সঙ্গে আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়িগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও সংস্কার করে বসবাসের উপযোগী করা হচ্ছে।’
উল্লেখ, ফেসবুকে ধর্মীয় উসকানিমূলক পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে গত রোববার রাতে হিন্দুপল্লি মাঝিপাড়ায় আক্রমণ করা হয়। এ সময় বাড়িঘরে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন হামলাকারীরা।
৩৭ আসামি রিমান্ডে: পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার মামলায় ৩৭ আসামির তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্রেপ্তার ৩৮ আসামিকে পীরগঞ্জ আমলি আদালতে তোলা হলে এই আদেশ দেন বিচারক ফজলে এলাহী খান। আর এক আসামির বয়স ১৮ বছরের কম হওয়ায় তাকে শিশু আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর আগে আসামিদের সাত দিনের রিমান্ডে পেতে আবেদন করে পুলিশ। সেই সঙ্গে আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের সাধারণ নিবন্ধক (জিআরও) শহিদুর রহমান।
ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত রোববার রাতে পীরগঞ্জের বড় করিমপুর মাঝিপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৬০টি পরিবার। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে দুটি মামলা করেন পীরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইসমাইল হোসেন। এর মধ্যে একটি মামলা হয়েছে হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটের ঘটনায়। এতে ৪১ জনের নামসহ অজ্ঞাতপরিচয় অনেককে আসামি করা হয়েছে।