কথায় বলে যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণই আশ। এই আশা টিকিয়ে রাখতে আগে দরকার শ্বাসের বায়ু। কিন্তু শ্বাসবায়ুই বিষে ভরা হলে আশা বলে তো আর কিছু থাকে না। কথাটি আসছে বায়ুদূষণে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে। বাংলাদেশ কত দিক থেকেই তো এগিয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই পুরোনো রেকর্ড ভাঙছে, আবার একেবারে নতুন মাইলফলকও ছুঁয়ে ফেলছে। কিন্তু এসব নতুন রেকর্ড ও মাইলফলকের সবটা ইতিবাচক নয়।
কিছু কিছু মাইলফলক আমাদের আনন্দে ভাসিয়ে দেয়, নতুন আশা দেখায়। এই যেমন দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্রিকেটাররা যে ইতিহাসের জন্ম দিলেন, তা তো মর্যাদার আসনে বসাল গোটা দেশকেই। বিপরীতে বায়ুদূষণে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খবর কমবেশি সবারই মনে এক ভয়ের অনুভূতি জাগিয়েছে।সুইজারল্যান্ডের সংস্থা আইকিউএয়ার ২২ মার্চ বায়ুদূষণের সূচক প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বিশ্বে বায়ুদূষণের মাত্রার বিচারে সবার ওপরে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। আর রাজধানী হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ঢাকা। বিশ্বের ১১৭টি দেশ, ৬ হাজার ৪৭৫টি অঞ্চল এবং স্থলভিত্তিক বায়ুর গুণমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে বায়ুদূষণ-সম্পর্কিত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ তো চ্যাম্পিয়ন হলো। কিন্তু স্কোর কত করল? এর উত্তরও আছে প্রতিবেদনটিতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রত্যাশিত বায়ুমান নির্দেশিকা অনুযায়ী, বাতাসে পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম ২ দশমিক ৫-এর পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি হলেই ওই বাতাসকে আর স্বাস্থ্যকর বলা যাবে না। বাংলাদেশের বাতাসে এই পরিমাণ পাওয়া গেছে ৭৬ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম, সমীক্ষাধীন ১১৭টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। অথচ নয়াদিল্লি রাজধানী শহরগুলোর তালিকায় ঢাকাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলেও ভারত এ ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে কিছুটা ভালো অবস্থানে আছে।
প্রতিবেশী দেশটিতে পিএম ২ দশমিক ৫-এর পরিমাণ ছিল ৫৮ দশমিক ১।গোটা বিশ্ব দুদিন পরপরই ভারতের বায়ুমান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। বিশেষত বায়ুদূষণে শীর্ষস্থান নিয়ে নয়াদিল্লির প্রতিযোগিতা চলে বেইজিংয়ের সঙ্গে—এমনটাই জানত মানুষ। কিন্তু এবারের তালিকা কিছু ভিন্ন বার্তাও দিল। প্রথমত, নয়াদিল্লি ও ঢাকার বায়ুমান কাছাকাছি হলেও ভারতের বাংলাদেশ থেকে কিছুটা এগিয়ে থাকা বলছে, বাংলাদেশের পুরোটাই দূষণের আওতায় চলে এসেছে। দ্বিতীয়ত, বেইজিংয়ের প্রথম থেকে ১৬তম অবস্থানে নেমে যাওয়া বলছে, বায়ুদূষণ প্রতিরোধে চীনের পদক্ষেপ অনুসরণীয় হতে পারে।এ দুটি বিষয়ই খুব গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া যেতে পারে। না হলে বছর শেষে সমীক্ষার ফল নিয়ে সেমিনার, বক্তৃতা, বিবৃতি ইত্যাদিতে ব্যস্ত থেকে সব ভুলে থাকার চেষ্টাও করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে জনতার জন্য ‘জেনে শুনে বিষ পান’ করে ‘প্রাণের আশা ছেড়ে’ অদৃষ্টের হাতে প্রাণ সঁপে দেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকে না। কোনটি করা হবে, তা নীতিনির্ধারকেরাই বলুন।