গড়াই নদের ভাঙনের কবলে পড়েছে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ৭ নম্বর হাকিমপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম। অনেকের বসতবাড়ি ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। নতুন করে ঝুঁকির মুখে রয়েছে গুচ্ছগ্রাম ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনেক বাড়ি। ঝুঁকিতে রয়েছে এসব গ্রামের শত শত বসতবাড়িও।
জানা গেছে, গড়াইয়ের ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে অনেকেই এখন নিঃস্ব। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের তীব্রতা বেশি দেখা দিলেও এই সময়ে পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙনের ভয়াল রূপ দেখা দিয়েছে। গড়াইয়ের পাড়ে বসবাসরত মানুষের দিন কাটছে প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে। দুই যুগের বেশি সময় ভাঙন রোধে ক্ষতিগ্রস্ত এসব এলাকায় সরকারি কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এমনকি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধও নেই।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চরম ঝুঁকিতে আছে এই ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রাম ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়িসহ পূর্বমাদলা, পশ্চিম মাদলা, খুলুমবাড়িয়া, জালশুকা, নলখুলা, সুবির্দাহ গোবিন্দপুর, শাহবাড়িয়া, কাশিনাথপুর গ্রামের মানুষের বসতভিটা। দীর্ঘদিন ধরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সংস্কার না হওয়ায় ফাটল ধরে তা গড়াইয়ে বিলীন হয়ে গেছে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় ঝুঁকিতে পড়েছে এসব এলাকার অনেক ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন ফসলি জমি। দুই যুগ ধরে একে একে গড়াই নদের ভাঙনের কবলে পড়ে বদলে গেছে উপজেলার এই ইউনিয়নের বড় একটি অংশের চিত্র। ভিটেবাড়ি, জমিজমা, সহায়-সম্বল হারিয়ে কেউ আশ্রয় নিয়েছেন ওপারে জেগে ওঠা চরে, কেউবা চলে গেছেন নিরাপদ আশ্রয়ে।
পূর্বমাদলা গ্রামের বাসিন্দা আবু জেহের বলেন, ‘তীব্র ভাঙনে এলাকার অনেক বাড়িসহ ফসলি জমি যেকোনো সময় গড়াই নদে বিলীন হতে পারে। আমরা খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি। অতি দ্রুত ভাঙন রুখতে না পারলে বিলীন হয়ে যাবে গুচ্ছগ্রাম ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরসহ ভিটেমাটি এবং চাষাবাদের জমির বিস্তীর্ণ এলাকা।’
সহায়-সম্বল হারানো পশ্চিম গ্রামের হাসিনা বেগম বলেন, ‘ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে এখন অনেকটাই নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার পরিবারের সবাই চলে গেলেও আমি স্বামীর ভিটা আঁকড়ে ধরে আছি। বর্তমানে খুব কষ্টে দিন পার করছি। আমার পরিবারের অন্য সদস্যরা অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।’
হাকিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান জিকু বলেন, খুলুমবাড়ি থেকে কাশিনাথপুর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় এর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গড়াই নদে মিশে গেছে। অনেক বসতভিটাসহ ঝুঁকিতে রয়েছে গুচ্ছগ্রাম ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো। অতি দ্রুত সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বনি আমিন বলেন, ‘আমি সরেজমিনে ঘুরে দেখেছি। বেশ ঝুঁকি নিয়েই বসবাস করছে সেখানকার লোকজন। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুতই বরাদ্দ আসবে। তখন কাজ শুরু হবে।’
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, ‘ইতিমধ্যে ওই এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। বিষয়টির স্থায়ী সমাধানের জন্য কাজ করছি। আশা করি, দ্রুতই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে যাবে।’