হোম > ছাপা সংস্করণ

মাটির ঘর এত সুন্দর

রিমন রহমান, রাজশাহী

গান শুনতে পছন্দ করেন কল্পনা কিসকু। তাই স্বামী রতন বেসরাকে একটা রেডিও কিনতে বলেছিলেন। স্ত্রীর সে আবদার রতন ফেলে দেননি। দুই মাস টাকা জমিয়ে কিনেছিলেন একটা রেডিও। সেই রেডিওতে এক অনুষ্ঠানে বলল, মাটির বাড়ি সাজালেও অনেক সুন্দর লাগে। এ জন্য দামি আসবাবের দরকার নেই। মাটি দিয়েই হবে সব। বাড়ি হবে সবার চেয়ে আলাদা, আর দৃষ্টিনন্দন।

প্রায় ২০ বছর আগে শোনা কথাগুলো মনে ধরে যায় কল্পনার। শুরু করেন মাটি দিয়ে ঘর সাজানোর কাজ। এখন তাঁর বাড়িটি সবার চেয়ে আলাদা। অথচ তাঁর বাড়িতে সবচেয়ে দামি জিনিস বলতে একটা টেলিভিশন। রেডিওর যুগ শেষ হওয়ায় এই টেলিভিশনটা কেনা হয়েছে। টেলিভিশন রাখার টেবিলসহ অন্য সব আসবাব মাটি দিয়েই গড়া। এমনকি শোবার একটা খাটও বানানো হয়েছে মাটি দিয়ে।

কল্পনা কিসকুর বাড়ি রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ঝালপুকুর গ্রামে। স্বামী রতন বেসরা ফেরি করে ভাঙারি জিনিসপত্র কিনে বিক্রি করেন। বড় ছেলে বিশ্বজিৎ বেসরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজে পড়ছেন। বিশ্বজিৎ শহরে থাকেন। অভাবের সংসারে ছোট ছেলে দুর্জয় বেসরার পড়াশোনা বেশি দূর হয়নি। বছর চারেক আগে অষ্টম শ্রেণি পাস করে এখন কাজ করেন মাঠে-ঘাটে। সকালে স্বামী-সন্তান কাজে বেরিয়ে যাওয়ার পর ঘরের অন্য কাজ শেষে কল্পনার বাকি সময়টা কাটে ঘর সাজাতে।

৩ এপ্রিল সকালে কল্পনার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির তিনটি ঘরই মাটির তৈরি। ওপরে টিনের চালা। পূর্ব দিকে এ বাড়ির একটা অংশে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি বাড়ি করে দেওয়া হয়েছে। কল্পনার মাটির পুরোনো তিনটি ঘর বাইরে থেকেই জানান দিচ্ছে, এ বাড়ি সবার চেয়ে আলাদা। বাইরের অংশে মাটির জানালাগুলো বেশ দৃষ্টিনন্দন। দেয়াল সাজানো আছে চুন আর রং দিয়ে। টিনের ছাউনির নিচের অংশটিতে চারদিকে মাটি দিয়েই করা হয়েছে বাহা (ফুল)। প্রতিটি ঘরের দরজা, জানালা ও দেয়ালের ওপরের অংশে মাটি দিয়ে করা হয়েছে লতাপাতা-ফুল আর ময়ূরের নকশা। ঘরের আড়ার কাঠগুলোও মাটি দিয়ে ঢেকে সেখানে করা হয়েছে ফুল। দেয়ালগুলোতে আঁকা রয়েছে আলপনা। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলের ঘরটিতে খাট বানানো হয়েছে মাটি দিয়ে। সে খাটের ফুলের নকশাও মাটি দিয়ে গড়া। লাল-নীল রং করে দেওয়ায় বোঝার উপায় নেই, এটি মাটির খাট।

মাটির দেয়াল কেটে কল্পনার তিনটি ঘরেই করা হয়েছে মাটির শোকেস। শোপিস হিসেবে সেখানে রাখা আছে মাটি দিয়ে তৈরি কাঠবিড়াল, হাতি, হরিণ, ঘোড়া, বালিহাঁস, বক, বাঘ, সিংহ, উট এবং এসবের দেখাশোনা করার জন্য একটি মেয়ে। কল্পনা তাঁর টেলিভিশনটি রেখেছেন মাটির টেবিলে। ঘরের আরেক টেবিলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে একটি মাটির পাখি। কল্পনা চাল-আটা রাখেন মাটি দিয়ে তৈরি তাঁর বিশেষ ধরনের দৃষ্টিনন্দন পাত্রে। টেবিল ফ্যান রাখার স্ট্যান্ডও মাটি দিয়ে তৈরি।

ফুল আর ঔষধি গাছে কল্পনার বাড়ির চারপাশ ঘেরা। ভেতর-বাহির সবটাই ভীষণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। কল্পনা বললেন, ‘নোংরা থাকতে ভালো লাগে না। যতই দুঃখ-কষ্ট থাকুক না কেন, মানুষকে বুঝতে দেব না। এর মধ্যেই এখন আমার সুখ।’

কল্পনার বাড়ির গোয়ালঘরটিতেও একটুখানি ময়লা-আবর্জনা দেখা গেল না।

কল্পনা জানালেন, মাটির বাড়ি হলেও সাজানো-গোছানো থাকায় তাঁদের ধনী ভাবা হয়েছে। তাই কোনো দিন কোনো অনুদান পাননি। এবারই প্রথম প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছেন। তবে নিজের শখের মাটির ঘর ভাঙেননি। কল্পনা বলেন, ‘এই ঘর আমার ২০ বছরের সাধনা। তা ভেঙে দিতে পারি না। সরকারি কর্মকর্তারাও তা বুঝেছেন। তাই মাটির ঘরের সঙ্গেই নতুন ঘর করে দিয়েছেন।’

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ