নরসিংদীতে পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্রেনের যাত্রাবিরতি ও আসন না থাকায় প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। প্রতিনিয়ত সীমিত সংখ্যক ট্রেনে যাতায়াতে দুর্ভোগের পাশাপাশি করোনায় বিধিনিষেধে অর্ধেক যাত্রী বহনের সিদ্ধান্তে এই দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। যাত্রীদের চাহিদা থাকলেও বছরের পর বছর ধরে বাড়তি ট্রেনের যাত্রাবিরতি ও আসন বরাদ্দে নেই কোনো উদ্যোগ। এই সমস্যা সমাধানে নতুন ট্রেন চালুর দাবি যাত্রীদের।
ট্রেনযাত্রী ও স্টেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী শিল্প, কৃষি ও শিক্ষাসমৃদ্ধ জেলা নরসিংদী। প্রতিনিয়ত ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন থেকে যাতায়াত করে থাকেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। এই রেলপথে ৫২টি ট্রেন চলাচল করলেও নরসিংদী রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতি রয়েছে মাত্র ২৮টির। এসব ট্রেনে নরসিংদী স্টেশনে দেড় শ আসন বরাদ্দ থাকলেও চাহিদা রয়েছে প্রায় তিন হাজার। প্রতিদিন হাজারো যাত্রী-চাহিদার বিপরীতে এসব ট্রেনে ভিড় ঠেলে গন্তব্যে পৌঁছাতে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।
এ ছাড়া জেলার আরও আটটি স্টেশন ঘোড়াশাল, জিনারদী, আমিরগঞ্জ, খানাবাড়ী, হাঁটুভাঙা, মেথিকান্দা, শ্রীনিধি, দৌলতকান্দিতেও থামছে না আন্তনগর ট্রেনগুলো। রেলওয়ের ডাবল লাইন চালু হওয়ার পর থেকে ট্রেনে যাত্রীর চাপ বাড়লেও চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতি ও গোধূলিসহ অন্যান্য ট্রেনের যাত্রাবিরতি নেই নরসিংদী স্টেশনেও। যাত্রাবিরতি নেই ঢাকা-সিলেট রেলপথে চলাচলকারী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের। নরসিংদী রেলস্টেশনসহ জেলার আরও আটটি স্টেশন থেকে স্বল্প সংখ্যক ট্রেনে প্রতিদিন সকালে ঢাকাগামী হাজারো চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীকে ধাক্কাধাক্কি করে ট্রেনে উঠতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। ভিড় ঠেলে ট্রেনে উঠতে পারেন না নারী, শিশু ও অসুস্থরা। জেলার মোট ৯টি স্টেশন থেকে হাজার হাজার যাত্রীর ঢাকায় আসা-যাওয়ার সুবিধার্থে ভৈরব থেকে ঢাকা পর্যন্ত লোকাল ট্রেন চালুর দাবি অনেকের। পাশাপাশি নরসিংদী স্টেশনে আন্তনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতিসহ আসনসংখ্যা বাড়ানোর দাবি তাঁদের।
নরসিংদী সুইড বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন সরকার বলেন, নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ অসুস্থ মানুষ যাঁরা বাসে চলাচল করতে অক্ষম, তাঁদের ট্রেনে যাতায়াতের সুবিধা নেই। যাত্রীর চাপ থাকলেও ট্রেন ও আসনের ব্যবস্থা নেই। নরসিংদীবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির মুখে দুটো আন্তনগর দেওয়া হলেও আসন বরাদ্দ নেই।
আমরা নরসিংদীবাসী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তৌকির আহমেদ বলেন, প্রতিদিন শুধু নরসিংদী শহরের রেলস্টেশন থেকেই কয়েক হাজার যাত্রী বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে ঢাকায় যাতায়াত করে থাকেন। কম সময়ে আরামদায়ক চলাচলের জন্য সবাই টিকিট কেটে যাতায়াতে আগ্রহী হলেও রেল কর্তৃপক্ষের আয় বাড়ানোর কোনো ইচ্ছে নেই বলে মনে হয়। পর্যাপ্ত সংখ্যক আসন ও ট্রেনের যাত্রাবিরতি বা বিশেষ কোনো ট্রেন চালু করা হলে যাত্রী দুর্ভোগ কমত।
নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার এ টি এম মুসা বলেন, এখান থেকে দৈনিক কমবেশি তিন হাজার যাত্রী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন। যাত্রী-চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত ট্রেন ও আসন না থাকায় প্রতিনিয়তই দুর্ভোগে পড়তে হয়। সব মিলিয়ে ২৫০ জন টিকিট কিনতে পারছেন। প্রয়োজনীয় টিকিট ও আসন না থাকায় প্রতিদিন অভিযোগের শেষ নেই। সম্প্রতি স্টেশন পরিদর্শনে এসে যাত্রীদের দাবির মুখে ঢাকা থেকে ভৈরব পর্যন্ত নতুন ট্রেন চালুর আশ্বাস দিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী।