চারদিকে সবুজের সমারোহ। রয়েছে আঁকাবাঁকা মেঠো পথ। রাখালেরা সেই সরু পথে গরু নিয়ে যাচ্ছেন গন্তব্যে। কনকনে শীতে দল বেঁধে চলছে গরুর পাল। পথের দুই প্রান্তে বিস্তৃত ফসলি জমি। এ ফসল যেন নষ্ট না হয়, সে জন্য প্রতিটি গরুর মুখে আছে মুখবন্ধনী।
এমন দৃশ্যের দেখা মেলে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার কাউয়াদিঘির হাওরাঞ্চলে। হাওরে এখন বাড়ছে গরু লালন-পালন। কারও ২টি কারও ৫ থেকে ১০টি। বোরো চাষ, মাছ শিকারের পাশাপাশি গরু-ছাগল লালন পালনে ঝুঁকছে মানুষ।
কথা হয় রাখল বালক শৈলেন দাশের সঙ্গে। গরুগুলোকে হাওরের পতিত জমিতে ঘাস খাওয়ানো জন্য নিয়ে যাচ্ছে। সে জানায়, হাওরে রাস্তার দুই পাশে ফসলি জমি। জমিগুলোতে ধানের চারা রোপণ করা। গরু যাতে চারাগুলো খেয়ে নষ্ট না করে, সে জন্য প্রতিটি গরুর মুখে থাকে মুখবন্ধনী।
কথা হয় কৃষক যতীন্দ্র দাশের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার ছয়টি গরু আছে; কৃষিখেতের পাশাপাশি এগুলো লালন-পালন করি। এতে আমার পরিবারে অতিরিক্ত আয় হয়।’
জানা গেছে, আগে ধান মাড়াইয়ের সময় গরুকে মুখবন্ধনী পরানো হতো। যাতে খাবারের দিক মনোযোগ না দিয়ে ধান মাড়াইয়ে পা চালাতে পারে। যান্ত্রিক যুগে এখন গরু দিয়ে ধান মাড়াই হয় না বললেই চলে। এতে মুখবন্ধনীর ব্যবহারও কমে গেছে। এখন শুধু হাওরাঞ্চলের কিছু কিছু বাড়িতে মুখবন্ধনী রাখা হয়। যাঁরা দূরে গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যান। মুখবন্ধনী লাগানো থাকলে চলার পথে গরু আশপাশের ফসল খেতে পারে না।
এ এলাকার নরেন্দ্র বিজয় দাশ জানান, মূলত বেত দিয়ে এ মুখবন্ধনী তৈরি হয়। বেত-বাঁশ সব সময় এখানে পাওয়া যায় না। বিকল্প হিসেবে পাঁচ লিটারের পানি কিংবা তেলের বোতল মুখবন্ধনী হিসেবে ব্যবহার হয়। বোতলের ওপরের অংশ কেটে ছোট ছোট ছিদ্র করে বাঁশের মুখবন্ধনীর মতোই সুতলি লাগিয়ে তৈরি করা হয়।
এ এলাকার ইউপি সদস্য রিপন দাশ বলেন, বর্তমান এ এলাকায় ছোট অনেক খামার রয়েছে। বিশেষ করে গরুর খামার বেশি।
ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাশ বলেন, শীত-বর্ষায় হাওরে দুই রকমে জীবন। শীতে সব শুকনো থাকলেও বর্ষায় থইথই পানি। বর্ষায় গবাদিপশু একটা নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে কচুরিপানা খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। আর শুষ্ক মৌসুমে হাওরের উন্মুক্ত প্রান্তরে বিচরণ করিয়ে লালন-পালন করা হয়।