হোম > ছাপা সংস্করণ

নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সা.)

কাজী ফারজানা আফরীন

নারী শব্দটি উচ্চারিত হলেই মানসপটে ভেসে আসে সমাজের এক অবহেলিত গোষ্ঠীর করুণ চিত্র, যারা প্রতিনিয়ত ছিটকে পড়ছে তাদের শাশ্বত মর্যাদার আসন থেকে; যুগ যুগ ধরে হয়েছে নির্যাতিত, নিষ্পেষিত। পেছনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ব্যাবিলনীয় সভ্যতায় হত্যাকারী পুরুষের বদলে তার স্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো। গ্রিক সভ্যতায় তাদের পৌরাণিক গল্পের নারী চরিত্র প্যান্ডোরাকে সমাজের সব দুঃখ-কষ্টের উৎস মনে করা হতো। আবার রোমানরাও কোনো অংশে কম ছিল না, মন চাইলেই তারা নারীদের হত্যা করে ফেলত। মিসরীয় সভ্যতায় নারী ছিল শয়তানের প্রতীক। ভারতবর্ষের সনাতন ধর্মের সতীদাহ প্রথা আর আরবে কন্যাশিশুদের জীবন্ত প্রোথিত করা তো ছিল অতি প্রচলিত সামাজিক রীতি। যুগের পর যুগ নারী কেবল ভোগ্যপণ্যের মতো জীবনযাপন করেছে; কোনো সমাজই তাকে তার প্রাপ্য সম্মান বুঝিয়ে দেয়নি। এমনকি পশ্চিমা বিশ্বেও নারীর অধিকার নিয়ে ১৭ শতকের আগে লক্ষণীয় কোনো আন্দোলন-ই শুরু হয়নি।

আরবের সেই অন্ধকার যুগে সর্বোত্তম আদর্শের অধিকারী মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে নারী-পুরুষ সবার কল্যাণে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে পাঠালেন সুন্দর ও কল্যাণকামী উত্তম জীবনব্যবস্থা—ইসলাম। পবিত্র কোরআনে ঘোষিত হলো, ‘আর নিশ্চয়ই আপনি সুন্দর চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা কলাম: ৪)

তাঁর অসাধারণ চারিত্রিক মাধুর্য ও অনুপম ব্যক্তিত্বের অনুসরণ করার তাগাদা দিয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব: ২১)

মহানবী (সা.) জাতি-ধর্ম-বর্ণ-শত্রু-মিত্রনির্বিশেষে সবার সঙ্গে ন্যায়সংগত আচরণ করতেন। তবে নারীর প্রতি উত্তম আচরণের ব্যাপারে তিনি বিশেষ দৃষ্টি রাখতেন। কারণ, সাধারণ আরবদের মধ্যে নারী নির্যাতনের রেওয়াজ ছিল। মহানবী (সা.) এ বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, ‘নারীরা আল্লাহ তাআলার দাসী, তোমাদের নয়। তাদের কখনোই মারধর করবে না।’ (আবু দাউদ)।

কোনো সফরে নারীরা অংশগ্রহণ করলে সবাইকে তিনি ধীরে ধীরে চলতে বলতেন। নারীদের আবেগ-অনুভূতির প্রতিও তিনি যথেষ্ট খেয়াল রাখতেন। একবার তিনি তাড়াতাড়ি নামাজ পড়ানো শেষ করে বললেন, ‘(মসজিদে) একটি বাচ্চা কাঁদছিল। আমার মনে হলো, ওর মায়ের মনে নিশ্চয়ই কষ্ট হচ্ছে। কাজেই, আমি তাড়াতাড়ি নামাজ শেষ করলাম, যাতে বাচ্চার মা তার বাচ্চার খবর নিতে পারে।’ (বুখারি)

স্ত্রীর প্রতি সদাচরণের ইঙ্গিত দিয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তাদের (নারীর) সঙ্গে উত্তম আচরণ করো এবং উত্তম আচরণ করার শিক্ষা দাও।’ (সুরা নিসা: ১৯)। মহানবী (সা.) তাঁর স্ত্রীদের মতামতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতেন। স্ত্রীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, ‘উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক।’ (মুসলিম)

তিনি আরও বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ (তিরমিজি)

হাদিসে আরও উল্লেখ রয়েছে, ‘যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে না, কিংবা তাকে মারধর করে, তার সম্পর্কে আমি তোমাদের বলে দিচ্ছি যে, সে আল্লাহর দৃষ্টিতে সৎ বলে বিবেচিত হবে না।’ (আবু দাউদ)

মা হিসেবে নারীকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দেয় ইসলাম। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, কে আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার বেশি হকদার?’ তিনি বললেন ‘তোমার মা’; সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা’; সে আবারও বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা’। সে পুনরায় বলল, ‘এরপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার বাবা।’ (বুখারি ও মুসলিম)

মহানবী (সা.) আরও ইরশাদ করেন, ‘মায়েদের পদতলে জান্নাত।’ (মুসলিম)

ওয়াইস কুরুনি (রহ.) মহানবী (সা.)-এর যুগের লোক ছিলেন। মায়ের সেবায় ব্যস্ত থাকায় তাঁকে নবীজি মদিনায় আসতে বারণ করেন। ফলে সাহাবি হওয়ার অনন্য মর্যাদা বিসর্জন দিয়ে তিনি মহানবী (সা.)-এর আদেশ মোতাবেক মায়ের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।

কন্যাসন্তানের গুরুত্ব বোঝাতে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যার তিনটি, দুটি বা একটি কন্যাসন্তান থাকবে এবং সেই ব্যক্তি যদি তার কন্যাসন্তানকে সুশিক্ষিত ও সুপাত্রস্থ করে, তার জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)

অন্য হাদিসে বলেন, ‘যার কন্যাসন্তান আছে, সে যদি তাকে (শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে) অবজ্ঞা ও অবহেলা না করে এবং পুত্রসন্তানকে তার ওপর প্রাধান্য না দেয়, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ (মুসনাদে আহমদ)

মহানবীই (সা.) প্রথম নারীর উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। তা ছাড়া, বিধবাদের সাহায্যকারীদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যারা বিধবা নারীর ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়, তারা যেন আল্লাহর পথে জিহাদকারী এবং নিরলস নামাজি ও সদা রোজা পালনকারী।’ (বুখারি ও মুসলিম)

মহানবীর (সা.) ওফাতের সময় সমবেত মুসলমানদের যেসব অসিয়ত করেছিলেন, তার মধ্যে একটি উপদেশ ছিল এ রকম—‘আমি তোমাদের আমার এই শেষ অসিয়ত করছি যে, নারীর সঙ্গে যেন সর্বদা উত্তম আচরণ করা হয়।’ (মুসলিম)

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও নারী, বিশ্বাসী পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, নম্র পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ ও নারী, সম্ভ্রম হেফাজতকারী পুরুষ ও নারী এবং আল্লাহকে অধিক সম্মানকারী পুরুষ ও নারীর জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও প্রতিদান রেখেছেন।’ (সুরা আহজাব: ৩৫)

এ আয়াত থেকে এটাই স্পষ্ট হয় যে নারী-পুরুষ উভয়েই আল্লাহর কাছে মর্যাদাপূর্ণ এবং কর্মসম্পাদনে পরস্পরের পরিপূরক।

সমাজে নারীর ভূমিকা অনন্য। নারীই পরিবার ও সমাজের ভিত রচনা করে দেয় এবং পরবর্তী প্রজন্ম নারীর কাছ থেকেই মৌলিক শিক্ষা লাভ করে। পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা এবং মহানবী (সা.)-এর সমগ্র জীবনাচরণ অনুসরণের মাধ্যমেই নারীর জীবন হতে পারে সর্বাধিক সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ। ভারসাম্যপূর্ণ সুখী পার্থিব জীবন এবং সাফল্যমণ্ডিত পরকালীন জীবনের জন্য প্রকৃত ও আদর্শ জীবনব্যবস্থা গ্রহণে নারী হোক সদা আত্মপ্রত্যয়ী।

কাজী ফারজানা আফরীন, সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ