সেবার জসীমউদ্দীন গিয়েছেন শান্তিনিকেতনে। সেখানে নন্দলাল বসুর সঙ্গে আলাপ জমে উঠল।
একদিন তাঁরা গেলেন গ্রন্থাগারিক প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি। সেখানেই তিনি দেখা পেলেন একটি ছোট্ট শিশুর। হাসু তার নাম। হাসুর সঙ্গে বন্ধুত্ব করে নিলেন তিনি। হাসু হেসেখেলে ঘুরে বেড়ায়। কবির ইচ্ছে হলো, বাচ্চাটার জন্য কবিতা লিখবেন। সন্ধ্যার চায়ের দাওয়াতে গল্প, গান, কবিতা সবই চলতে লাগল।
একদিন এল বিদায়ের পালা। জসীমউদ্দীন হাসুকে বললেন, ‘আমি তোমাকে চিঠি লিখব কবিতায় কবিতায়।
তুমি উত্তর দেবে?’
ছোট্ট হাসু কী বুঝল কে জানে, বলল, ‘দেব।’
এরপর কলকাতা থেকে একের পর এক কবিতা পাঠাতে লাগলেন জসীমউদ্দীন। আগে কোনো দিন বাচ্চাদের জন্য কবিতা লেখেননি তিনি। শুরু হলো এবার হাসুকে নিয়ে লেখা।
হাসুর কি আর এসব পড়ার সময় আছে? সে তো পাড়ার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খেলে বেড়ায়।
একদিন অবশ্য ঠিকই সে তার আঁকাবাঁকা অক্ষরে চিঠির উত্তর দিল এবং মাঝেমধ্যে তার চিঠির উত্তর আসতে লাগল।
কী যে খুশি হলেন জসীমউদ্দীন!
এরপর একবার হাসু বেড়াতে গেছে যাদবপুরে। সেখানেও চলে গেলেন কবি। ঠাট্টা-তামাশায় মন ভরে ফেললেন শিশুটির। এরপর অনেকগুলো বছর চলে গেছে। একদিন হাসুদের বাসায় এসে তিনি দেখেন, হাসু অনেক বড় হয়ে গেছে। লজ্জা পাচ্ছে জসীমউদ্দীনকে দেখে।
জসীমউদ্দীনের মনে হলো রবীন্দ্রনাথের কাবুলিওয়ালা গল্পটির কথা।
এভাবেই শিশুরা বড় হয়ে যায়। কিন্তু সে সময় হাসুকে নিয়ে যে লেখাগুলো লিখেছিলেন কবি, সেগুলো এখনো টিকে আছে।
সূত্র: জসীমউদ্দীন, ঠাকুরবাড়ির আঙিনায়, পৃষ্ঠা ১৭-১৯