নিষিদ্ধ জাটকায় সয়লাব উপকূলীয় দ্বীপজেলা ভোলার হাটবাজার। প্রতিদিন ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে প্রায় দুই মণ জাটকা ধরা পড়ছে, যা জেলার বাজার ও পাড়া-মহল্লায় ফেরি করে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। জাটকা সংরক্ষণে স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা মৎস্য অফিস বিশেষ কম্বিং অভিযান পরিচালনা করছে। ৩০ ডিসেম্বর থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত এই অভিযানে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মিটার নিষিদ্ধ জাল জব্দ করা হয়। তবু কমছে না জাটকা ধরা।
ভোলা মাছঘাটের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মৎস্য বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে গোপন সমঝোতায় রয়েছে প্রভাবশালী আড়তদারদের। এ জন্য মাঝেমধ্যে চলে লোকদেখানো অভিযান। কিন্তু যাঁরা প্রকাশ্যে জাটকা ধরছেন ও বিক্রি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় কিছু জেলে বিভিন্ন ধরনের অবৈধ জাল ফেলে নিষিদ্ধ জাটকাসহ নানা প্রজাতির ছোট পোনা ধরছেন। ফলে ইলিশ ও বিভিন্ন মাছের প্রজনন ধ্বংস হচ্ছে। কিন্তু মৎস্য বিভাগ কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেই প্রভাবশালীদের ধরছে না। নামমাত্র অভিযানে কিছু জাটকা ও জাল জব্দ করলেও অভিযান জোরদার না হওয়ায় এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে না। এদিকে সকাল ৯টার মধ্যে ভোলার মাছঘাটে জাটকাবোঝাই ট্রলার আসে। আড়তঘরগুলোতে পাইকারি ডাকে বিক্রি হয় জাটকা। এ কারণে জাটকার পাইকারি দাম কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।
সদর উপজেলার কিচেন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা জাটকা বিক্রি করছেন। এদের মধ্যে আলমগীর নামের একজন জানান, আগে জাটকার হালি বিক্রি হতো ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। আর এখন এক হালি জাটকা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়।
সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতলি মেঘনা নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, শতাধিক জেলে নদী থেকে মাছ ধরে এনেছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই জাটকা।
এ বিষয়ে স্থানীয় চায়ের দোকানি জাহাঙ্গীর মাঝি বলেন, ‘আগে নদীতে জাল বাইতাম। এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মদদে কিছু জেলে অবৈধ জাল ও বিন্দি জাল দিয়ে জাটকাসহ ছোট ছোট মাছ ধরেন। প্রশাসন তাঁদের কিছু বলে না।’
ভোলা জেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি এরশাদ বলেন, ‘ভোলার নদ-নদীতে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার মণ জাটকা ধরা পড়ছে।’
অভিযোগ রয়েছে, ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ভোলার খাল নামক এলাকার প্রভাবশালী আড়তদার সিরাজুল ইসলামের ছত্রছায়ায় কিছু জেলে অবৈধ জাল দিয়ে জাটকা ধরেন। এ ছাড়া তুলাতলী মাছঘাটের আর এক আড়তদারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তাঁর বক্তব্য না পাওয়ায় এই প্রতিবেদনে নাম প্রকাশ করা হয়নি।
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আড়তদার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জাটকা ধরতে জেলেদের উৎসাহিত করছি না। জেলেরা নিজেরা জাটকা ধরছেন।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জেলার সব উপজেলায় নিয়মিত অভিযান চলছে। জব্দ করা হচ্ছে নিষিদ্ধ জাল ও জাটকা। ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলায় ৮৫টি বিশেষ কম্বিং অপারেশন চালানো হয়। এ সময় ৩৮৮টি অবৈধ বেহুন্দি জাল, ২ লাখ ১৫ হাজার মিটার অন্যান্য জাল, ৪৭টি মশারি জাল, ১০১টি চরঘেরা জাল, ৮টি জগৎবেড় জাল ও ২টি ধরা জাল জব্দ করা হয়।’
১৪ থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশেষ কম্বিং অপারেশনে ৪ দশমিক ৭৫ মেট্রিক টন জাটকা জব্দ করা হয়। এ ছাড়া ১৮৮টি বেহুন্দি জাল, ১ লাখ ৩৫ হাজার মিটার কারেন্ট জাল ও ৭৯ অন্যান্য জাল জব্দ করা হয়। এ সময় মামলা হয় ৩টি। জরিমানা করা হয় ২২ হাজার টাকা।