হাফিজ উদ্দিন আহমদ ঢাকায় এসেছিলেন বরিশাল থেকে। ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া আর বিখ্যাত ফুটবল খেলোয়াড় হওয়ার বাসনা ছিল তাঁর। ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। সে সময় জমজমাট আন্তবিভাগীয় ফুটবল টুর্নামেন্ট হতো। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের টিমটি ছিল তুখোড়। সেই দলটিতে যাঁরা খেলতেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন পরবর্তীকালের জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার মঞ্জুরুল হাসান মিন্টু। মিন্টু ছিলেন জাতীয় দলের গোলরক্ষক। কিন্তু ডিফেন্স অত্যন্ত ভালো হওয়ায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান দলের গোলপোস্ট পর্যন্ত বল আসত না, তাই মিন্টু তখন গোল ঠেকানো বাদ দিয়ে রাইট উইং পজিশনে খেলছেন। গোলকিপার ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক, যিনি পরে আওয়ামী লীগের বড় নেতা হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে জাতীয় রাজনীতিতে অংশ নেওয়া আবদুস সাত্তার (জাতীয় পার্টি), ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাও (বিএনপির মন্ত্রী) ছিলেন এই দলের খেলোয়াড়। প্রাদেশিক ফুটবল দলের সাইফুদ্দীন, এজাজ রসুল, কামরুজ্জামান, ম. কামরুল ইসলামরাও খেলতেন এই দলে।
যে ১৪ জন খেলোয়াড়ের তালিকা করা হলো, তার ১৪ নম্বরে ছিল হাফিজের নাম। সেটা ১৯৬১ সাল। খেলা হবে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সঙ্গে। খুবই দুর্বল টিম। প্রথম একাদশে না থাকায় বিষণ্ন মনে বসে আছেন হাফিজ। এ সময় দেখা গেল নিয়মিত দলের একজন খেলোয়াড় অনুপস্থিত। দলের অধিনায়ক সাত্তার বললেন, ‘বরিশাল না কোত্থেকে একটা নতুন ছোকরা এসেছে, ওকেই নামিয়ে দাও।’
তারপর ঘটল অঘটন। প্রথম পনেরো মিনিটে হাফিজ একাই হ্যাটট্রিকসহ চারটি গোল করলেন। মাঠে তুমুল করতালি আর অভিনন্দন। হাফ টাইমের সময় বিভাগীয় প্রধান ড. নিউম্যান দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন হাফিজকে। কিন্তু হাফিজ যে একটা অঘটন ঘটিয়েছেন, সেটা তিনি নিজেই জানতেন না। হাফ টাইমের পর সমাজবিজ্ঞান দল রাগ করে আর মাঠেই এল না। জানা গেল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান দলের সিনিয়ররা সমাজবিজ্ঞান বিভাগকে কথা দিয়েছিলেন, দুই গোলের বেশি দেবেন না। হাফিজকে তো সে কথা কেউ বলেনি, তাই হাফিজ উদ্দিন প্রথমার্ধেই গোল দিয়েছেন চারটি!
সূত্র: হাফিজ উদ্দিন আহমদ, বীর বিক্রম, স্মৃতিময় ১৯৬৫, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পৃষ্ঠা ৪৫-৪৬