আমাদের মতো অনেকেই স্কুলে সুনির্মল বসুর একটি কবিতা পড়েছেন এবং অনেকেই সেটা মুখস্থ করেছেন। কবিতাটির নাম ‘সবার আমি ছাত্র’। তার কয়েক ছত্র এমন: ‘আকাশ আমায় শিক্ষা দিল উদার হতে ভাই রে; কর্মী হবার মন্ত্র আমি বায়ুর কাছে পাই রে...’।
তিনি কিন্তু ছিলেন মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরের মালখানগরের সন্তান। জন্ম হয়েছিল গিরিডিতে, বাবার কর্মস্থলে। লেখার হাত ছিল খুব ভালো, সেটা তাঁর লেখার সঙ্গে পরিচিত হলেই বোঝা যায়।
যে সময় স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তিনি, সে সময় ইংরেজি, ইতিহাস, ভূগোল, জ্যামিতি সবকিছুই ইংরেজিতে পড়তে হতো।
ম্যাট্রিকে যখন পড়ছেন তিনি, তখন ইংরেজি গদ্য ও পদ্য পড়তেন বটে, কিন্তু প্রশ্ন আসত সম্পূর্ণ বাইরে থেকে। বাংলারও কোনো নির্দিষ্ট বই ছিল না। শিক্ষক হিমাংশুবাবু তাঁদের রবীন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথদের কবিতা পড়াতেন।
তিনি একদিন ক্লাসে এসে বললেন, ‘কবির কান কী রকম হয়?’
প্রত্যেকেই নিজেদের সাধ্যমতো লেখার চেষ্টা করল। আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে লেখা। কেউ লিখল, কীভাবে কবিদের কানে ছন্দগুলো বাজে। সাধারণ মানুষের তুলনায় একটু বিশেষভাবে জগতের সুরতরঙ্গ তাঁরা অনুভব করেন ইত্যাদি ইত্যাদি।
একটা ছেলে অবশ্য কবির কান নিয়ে সাহিত্যের ধারেকাছে গেল না। সে একেবারে ‘বাস্তব’ জগৎ থেকে উদাহরণ টেনে এনে লিখল, ‘কবির কান আমাদের চেয়ে আকারে কিছু বড়। হেমচন্দ্র, নবীনচন্দ্র, মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ প্রভৃতির চিত্রে দেখা যায়, তাঁহাদের কান অনেকটা ঝুলিয়া রহিয়াছে। এই কানের দৌলতেই তাঁহারা কবি। কান বড় না হইলে কবি হওয়া যায় না। বিলাতের বড় বড় কবিরাও বড় বড় কানের অধিকারী।’
এই লেখা পড়ে হিমাংশুবাবু হেসেই খুন। তিনি হাসতে হাসতে বললেন, ‘ওহে, তোমার কি ধারণা কবিরা সবাই গাধা–তাই তাঁদের গাধার মতো কান থাকতে হবে?’
সূত্র: সুনির্মল বসু, জীবনখাতার কয়েকপাতা