সেবার নিউইয়র্কে বসেছিল কবিতা সম্মেলন। দিলারা হাশিম, সুরাইয়া খানম আর দিলশাদ রেজা—এই তিন স্বনামে পরিচিত বোন উপস্থিত ছিলেন সেই সম্মেলনে। তাঁদের মধ্যে সুরাইয়া খানম একটু আলাদা। কবি আবুল হাসানের সঙ্গে তাঁর ছিল বোঝাপড়া। ‘নাচের শব্দ’ নামে তাঁর যে কাব্যগ্রন্থটি আছে, সেটা পড়লেই বোঝা যায়, কতটা স্মার্ট ভাষায় ব্যঞ্জনাময় কবিতা তিনি লিখতেন।
নিউইয়র্কে যে এত কবি, তা কারই-বা জানা ছিল। একের পর এক কবি মঞ্চে উঠছেন আর পাঠ করছেন স্বরচিত কবিতা। আগে আলোচনা সভায় আলোচনা করেছেন দিলারা হাশেম, খোন্দকার জাহাঙ্গীর, সুরাইয়া খানম, সাজেদ কামাল, এম এম মহসিন, সলিমুল্লাহ খান, ইকবাল হাসান। শেষে যখন গান হচ্ছে, ভেসে আসছে ‘একবার ধরতে পারলে মনবেড়ি দিতাম পাখির পায়’…, তখন ইকবাল হাসান উঠে গিয়ে সুরাইয়া খানমের পাশে বসে বললেন, ‘যাবেন?’
সুরাইয়া বললেন, ‘কোথায়?’
‘জ্যোতিদার বাড়িতে। ওখানে আড্ডা হবে রাতভর।’
জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত আর পূরবী দত্তের (বসু) বাড়িতে যে অনেক সময়ই এ রকম আড্ডা বসে, সেটা নিউইয়র্কের সবাই জানে।
সুরাইয়া ইদানীং লেখালেখি করছেন কি না, জানার ঔৎসুক্য ছিল সবার।
সুরাইয়া বললেন, ‘কে বলেছে আমি লিখি না? আমি লিখে যাচ্ছি নিয়মিত। কিন্তু প্রকাশ করতে চাই না। লেখাটাই মুখ্য। প্রকাশ করাটা নয়।’
একমত হলেন না জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত। বললেন, ‘যদি প্রকাশ না-ই করব, তবে লিখব কেন? আমি আমার শেষ লেখাটিও ছাপা হরফে দেখে যেতে চাই।’
তখনই জানা গেল, এরই মধ্যে অনেক কিছু লিখেছেন সুরাইয়া খানম। ‘অভিমানের বাঁশি’, ‘গোরখাদকের সংলাপ’, ‘কালো মানুষের ক্বাসিদা’, ‘বীজতলার গান’ আর ‘মহিলা’ নামে ছোট্ট একটা উপন্যাস লিখে ফেলেছেন তিনি। প্রকাশ করার কথা ভাবছেন না তখনো। ভালো প্রকাশক পেলে ভাববেন হয়তো।
সে বহুকাল আগের কথা। এরপর সুরাইয়া খানম মারা গেছেন। কিন্তু তাঁর অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপিগুলো কোথায় আছে, তা কি জানা যাবে কখনো?
সূত্র: ইকবাল হাসান, দূরের মানুষ কাছের মানুষ, পৃষ্ঠা ৬০-৬২