শিল্পী সোহরাব হোসেনকে এখন সবাই নজরুলসংগীতশিল্পী হিসেবেই জানেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত সেটাই ছিল তাঁর পরিচয়। অথচ তিনি যখন গান শুরু করেছিলেন তখন আধুনিক, পল্লিগীতিও গাইতেন। তবে হ্যাঁ, নজরুলসংগীতটা ছিল তাঁর প্রাণের চেয়ে প্রিয়। কণ্ঠমাধুর্য আর কণ্ঠের কারুকাজ ছিল তাঁর অসাধারণ। ‘মেঘবরন কন্যা থাকে মেঘমালতীর দেশে’ গানটি যখন করতেন, দর্শক-শ্রোতারা তখন তন্ময় হয়ে শুনত। একই কথা অন্য গানগুলো নিয়েও।
শরীর খারাপ থাকলে মেজাজও খারাপ হতো তাঁর। ছায়ানটে যখন ‘সম্মানিত শিক্ষাগুরু’ করা হলো তাঁকে, তখন তাঁর শরীর খারাপ যাচ্ছিল। ক্লাস নেওয়ার সময় একবার একটু ঝামেলা তৈরি হলো। তিনি ছাত্রছাত্রীদের বললেন, ‘আমি শুক্কুরবারের ক্লাস নিতে পারব না, শনিবারে নেব।’ নিজে তো বলেছেন এই কথা, কিন্তু নিজেই গেছেন ভুলে। ফলে পরের শুক্রবার এসে হাজির হলেন ক্লাস নিতে, কোনো শিক্ষার্থী নেই। রেগেমেগে চোটপাট শুরু করলেন, ‘হ্যাঁ, আমি দুপুরে ভালো করে বিশ্রাম না নিয়ে ক্লাস নেবার জন্য ছুটে আসি আর ছেলেমেয়েরা নেই!’
তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করা হলো, তিনি নিজেই ছেলেমেয়েদের বলে দিয়েছেন, শুক্রবারের জায়গায় শনিবার ক্লাস নেবেন, কিন্তু কে শোনে কার কথা? রেগেমেগে চলে যাওয়ার আগে বলে গেলেন, ‘আমি আর ছায়ানটে আসব না।’
বুড়ো মানুষের মান ভাঙানো সোজা কথা নয়। তারপরও সন্জীদা খাতুন আর সাইফউদ্দৌলা গেলেন তাঁর বাড়িতে। মান ভাঙবে কি না, বোঝা যাচ্ছে না। তাঁর এক কথা, ক্লাস আর নেবেন না। সন্জীদা খাতুন তখন এক ফন্দি করলেন। সোহরাব হোসেনের স্ত্রীকে বললেন, ‘ভাবি, আজ ভাত খাব।’
সঙ্গে সঙ্গে মুরগি জবাই করা হলো। রান্না হলো। খাওয়া-দাওয়া হলো। খেয়ে উঠতে উঠতে প্রায় তিনটা। সংগীতবিদ্যায়তনের ক্লাসও তিনটা থেকে। তাঁরা দুজন বের হবেন যখন, তখন সোহরাব হোসেন বললেন, ‘চলো, আমি মোটরসাইকেল নিয়ে বের হচ্ছি।’
সূত্র: সন্জীদা খাতুন, স্মৃতিপটে গুণীজন, পৃষ্ঠা ২৭-২৮