খোঁজখবর নিয়ে কাজ শুরু করা উচিত
সালাহউদ্দিন লাভলু, সভাপতি, ডিরেক্টরস গিল্ড
শুটিং হাউসের পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন দেওয়া আছে শুটিং হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনকে। সাংগঠনিক মিটিংয়ে সব সময় এ নিয়ে আলোচনা হয়। যে শুটিং হাউসে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেটি একেবারে নতুন। দেখতে হবে তারা গাইডলাইন মেইনটেইন করেছে কি না। তবে শুটিং শুরু করার আগে নিরাপত্তার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে কাজ শুরু করা উচিত। সবার জন্যই নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আমি সাধারণত পুবাইলে শুটিং করি। সেখানে শুটিং হাউসগুলোর পরিবেশ ভালো। তবু আমি সব বিষয়ে খোঁজ নিয়ে, যাচাই করে শুটিং শুরু করি। অভিনেত্রী শারমিন আঁখির দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। দোয়া করি তিনি যেন শিগগির কাজে ফিরতে পারেন।
রওনক হাসান, সাধারণ সম্পাদক, অভিনয়শিল্পী সংঘ
নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আমরা শুটিং হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে একাধিকবার বসেছি। তবে এটা প্রতিদিন মেইনটেইন হয় না। অনেক সময় শুটিংয়ে গিয়ে চিল্লাচিল্লি করি, তখন হয়তো সব ঠিক করে দেয়। আসলে সবকিছু মিলিয়ে আমাদের অধিকাংশ শুটিং হাউস ব্যবহারের উপযুক্ত নয়। এ বিষয়ে শিল্পীরাও অভিযোগ জানান। হাউসগুলোতে পর্যাপ্ত লোক থাকে না। যেসব হাউস বেশি চলে, সেগুলো অতি ব্যবহারে নোংরা হয়। এসব বিষয়ে পরিচালক-প্রযোজকদেরও সচেতন হওয়া দরকার। আমরা শিল্পীরা চাইলেও এগুলো সমাধান করতে পারি না। ধরেন, আমি এক জায়গায় গিয়ে দেখলাম সেখানে শুটিং করার পরিবেশ নেই। চাইলেই কি আমরা শুটিং না করে চলে আসতে পারি? শিল্পীদের সব সময় কম্প্রোমাইজ করতে হয়। বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও ভাববার আছে। এভাবে আর কত দিন করা যাবে বা আদৌ করব কি না। এই মুহূর্তে শারমিন আঁখির সুস্থতা আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সকাল আহমেদ, নাট্যনির্মাতা
আমরা অনেক আগে থেকেই বলছি, শুটিং হাউসগুলোর প্রপস থেকে শুরু করে সোফা, দেয়ালের রং, রুম—সবকিছুই অপ্রতুল। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, তাঁরা যেন প্রতিদিন হাউসগুলো চেক করেন। একটা ইউনিট চলে যাওয়ার পরে ঘরগুলো পরিষ্কার করা, ওয়াশরুম পরিষ্কার করা, বিদ্যুতের লাইনগুলো পর্যবেক্ষণ করা। এ ছাড়া অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে যাতে রাখা হয়। শিল্পী-নির্মাতাদের মতো শুটিং হাউসগুলোও কিন্তু নাটকের একটি অংশ। আঁখির সঙ্গে যে বিপদ ঘটেছে, তা কিন্তু হাউসের ছেলেদের সঙ্গেও ঘটতে পারত। আমরা সকালে গিয়ে রাতে চলে আসি, তাঁরা কিন্তু ২৪ ঘণ্টা সেখানে থাকেন। সংগঠনগুলো থেকে গাইডলাইন দেওয়া হলে প্রথম দিকে মানার চেষ্টা করলেও ধীরে ধীরে তা কমে আসে। গাইডলাইন মানা হচ্ছে কি না সে বিষয়টি যেন মনিটরিং করা হয়।
মো. খলিলুর রহমান, উপদেষ্টা, শুটিং হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন
আমাদের সংগঠনের তালিকাভুক্ত যে হাউসগুলো আছে, সেখানে আমরা নিয়মিত যাই। হাউসগুলোতে কোনো সমস্যা আছে কি না তা যাচাই করি। এটা ঠিক, সব হাউসে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নেই। যেহেতু এ রকম একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাই সবাইকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। শুটিং ইউনিটগুলোকেও দায়িত্ব নিতে হবে। দিনের বেশির ভাগ সময় এখানেই কাটায় তারা। কিন্তু ব্যবহারটা নিজের বাড়ির মতো কেউ করে না। তারপরেও আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু সমস্যা হলো সংগঠনের বাইরে অনেক হাউস হয়েছে, সেগুলো দেখার দায়ভার আমাদের না। মিরপুরে যে দুর্ঘটনা ঘটল, সেই হাউস আমাদের সংগঠনের তালিকাভুক্ত নয়। এখন আনাচকানাচে অনেক শুটিং হাউস গড়ে উঠেছে, যারা জানেও না কী কী করতে হয়। নির্মাতারাও কিছু টাকা কম পেয়ে ছুটে যাচ্ছেন সেখানে। পরিচালক-প্রযোজকদের খোঁজ নেওয়া উচিত, যে হাউসে কাজ করছেন, সেটি সাংগঠনিকভাবে লিপিবদ্ধ কি না, গাইডলাইন মানছে কি না।
হিমি, অভিনেত্রী
দুর্ঘটনা তো যেকোনো জায়গায় হতে পারে। রাস্তাঘাটে হতে পারে, বাসায় হতে পারে, লিফটেও হতে পারে। তবে শুটিং হাউসে আমরা কিছুটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি, এটা সত্য। আমি নিজে মেকআপ রুমে একবার মাল্টিপ্লাগে শর্টসার্কিট হতে দেখেছি। এ ছাড়া অনেক সময় দেখা যায় মাল্টিপ্লাগের সুইচটা তার দিয়ে কোনোমতে আটকানো হয়েছে। টেকনিশিয়ানরাও অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। এসব জায়গায় আমাদের সবার সচেতনতা দরকার। আসলে এর মধ্যে কাজ করতে করতে আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় আসে না। তারপরও হাউসমালিকদের জানানো হয় সমস্যাগুলো। অনেক সময় তাঁরা ঠিক করে দেন। অনেক সময় দেখা যায়, অভিযোগ শোনা পর্যন্তই শেষ। তবে সব হাউস এক রকম নয়। কিছু কিছু হাউস আছে, যেগুলোয় অনেক ভালো সুযোগ-সুবিধা আছে।