মির্জাপুর উপজেলা সদরের বাওয়ার কুমারজানী গ্রামের দরিদ্র কৃষক ফেরদৌস মিয়া। অন্যের জমি বর্গা চাষ করেন তিনি। পাশাপাশি স্ত্রীকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান দুটি গাভি পালন করতেন। এতেই চলত তাঁদের সংসার। গত সোমবার রাতে গোয়ালঘরের তালা ভেঙে তাঁর দুটি গরু চুরি করে নিয়ে যায়।
ফেরদৌসের বাড়ির ১০০ হাত পশ্চিমে মৃত মোজ্জামেল হোসেনের বাড়ি। তাঁর তিন ছেলের মধ্যে দুই ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে অটোচালক এনায়েতের আয়ে কোনোমতে চলে সংসার। এনায়েত ভাইদের নিয়ে দুটি গরু পালন করতেন। ২০ দিন আগে রাতে গোয়ালঘরের তালা ভেঙে গরু দুটি নিয়ে যায়।
এ ঘটনার পাঁচ দিন আগে পাশের মীর দেওহাটা গ্রামের মহর আলীর দুটি গরুও চুরি করে নেয়। এভাবে একের পর এক গরু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে অসহায় পরিবারগুলো। থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেও মিলছে না গরুর সন্ধান।
শুধু ফেরদৌস, এনায়েত আর মহর আলীর গরু চুরি নয়, গত দুই বছরে উপজেলার গ্রামে গ্রামে গরু চুরির ঘটনা বেড়ে গেছে। প্রায়ই উপজেলার কোথাও না কোথাও ঘটছে গরু চুরির এমন ঘটনা। এতে আয়ের প্রধান অনুষঙ্গ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন স্বল্প আয়ের অনেক কৃষক।
পরপর এসব ঘটনা ঘটতে থাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। তাই গরু হারানোর ভয়ে অনেক এলাকায় রাত জেগে গোয়ালঘর পাহারা দিচ্ছেন কৃষকেরা।
অন্যদিকে গরু চুরি ঠেকাতে এ বছর ১৬ জানুয়ারি পাঁচ দফা দাবিতে উপজেলার উয়ার্শী ইউনিয়নের ভুক্তভোগী কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন মির্জাপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তারা দাবি করেন গত দুই বছরের উয়ার্শী ইউনিয়নের ২২ জনের বাড়ি থেকে ৪৬টি গরু চুরি হয়েছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য পঁয়ত্রিশ লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ রিজাউল হক বলেন, মির্জাপুর একটি বড় থানা। চুরিসহ অপরাধ বন্ধে রাতে পুলিশ টহল দিয়ে থাকেন। কিন্তু পুলিশের স্বল্পতার কারণে ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় গ্রামে গ্রামে টহল দেওয়া সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে গৃহস্থের সচেতন হতে হবে। মাত্র ৫০০ টাকায় অ্যালার্ম লক পাওয়া যায়। যা গোয়ালঘরের চারপাশে লাগানো যেতে পারে।