বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গেছেন আনিসুজ্জামান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পুরো মেলা ঘুরে বেড়ালেন। বয়স হয়েছে। কিছুক্ষণ হাঁটার পর দেখা গেল আনিসুজ্জামান হাঁপাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘স্যার, আপনি আর হাঁটবেন না।’ কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে গাড়িতে উঠিয়ে বিদায় না দেওয়া পর্যন্ত আনিসুজ্জামান বসেননি। প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর আর একমুহূর্তও দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি ছিল না তাঁর। উপস্থিত মানুষের কেউ একজন একটা চেয়ার এগিয়ে দিলেন। গেটের কাছেই বসে রইলেন আনিসুজ্জামান। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ আনিসুজ্জামানের ছেলে আনন্দকে বললেন, ‘এখনই হাসপাতালে নিয়ে যাও।’
শেষ বয়সে আসার পর ক্লান্তি তাঁকে বেঁধে ফেলেছিল। সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে রাত ১১টা পর্যন্ত নানা কাজে ব্যস্ত ছিলেন ৮৩ বছর বয়সী এই মানুষটি। ভাবা যায়! একদিন সকাল সাড়ে ৯টায় বেরিয়ে ১১টায় একটা মিটিং সেরে দুপুরে বাইরে খেয়ে আবার ৪টায় মিটিং করে ৭টায় দাওয়াত খেয়ে রাত সোয়া ১১টায় বাড়ি ফিরেছেন। মেয়ের বাড়িতে ছিলেন মিসেস আনিসুজ্জামান, অর্থাৎ সিদ্দিকা জামান। তাঁকে নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা। কিন্তু শরীর এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে তিনি সে কথা ভুলেই গিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরেও হাঁপাচ্ছিলেন। পানি খাবেন কি না, তারও উত্তর দিতে পারেননি। আধা অচেতন অবস্থায় শুয়ে ছিলেন অনেকক্ষণ।
শেষদিকে যখন রাতে বাড়ি ফিরতেন, তখন এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়তেন যে পা টেনে টেনে হাঁটতেন। তাঁর চেহারার দিকে তাকানো যেত না।
তিনি যে ভালো নেই, সেটা বোঝা যাচ্ছিল। এ অবস্থায় বাইরে মিটিং করা শরীরের জন্য খুবই সংকট বয়ে আনত। কিন্তু আনিসুজ্জামান তা বুঝতে চাইতেন না। একবার তাঁকে বলা হয়েছিল ব্যস্ততা কমাতে। তাতে দুঃখ পেয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘অনেক দিন বেঁচেছি, তা ছাড়া মানুষেরও তো একটা প্রত্যাশা আছে আমার কাছে। সুতরাং এভাবেই চলতে চাই।’
সূত্র: সিদ্দিকা জামান, আমার বিপুলা পৃথিবী, পৃষ্ঠা ১৩৯-১৪০