ঢাকায় প্রথম শহীদ মিনার তৈরি হয়েছিল বায়ান্নর ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে। যাঁরা মেডিকেল ব্যারাকে ছিলেন, তাঁরা মিলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ভাষাশহীদদের স্মরণে একটি শহীদ মিনার তৈরি করা দরকার। মূল নকশাটা ছিল বদরুল আলমের করা। সাঈদ হায়দারও একটু হাত লাগিয়েছিলেন। ইট-বালু ছিল কাছেই। কিন্তু সিমেন্ট পাওয়া যাবে কোথায়? সিমেন্ট ছিল গুদামে, আর সেই গুদামের চাবি ছিল পিয়ারু সরদারের কাছে। পিয়ারু সরদারের কাছে যেতে হবে, চাইতে হবে গুদামের চাবি। তারপর গুদাম থেকে সিমেন্ট বের করতে হবে।
কিন্তু পরিচিত না হলে বেঁকে বসতে পারেন পিয়ারু সরদার। কে চেনে পিয়ারু সরদারকে? দেখা গেল মেডিকেল ছাত্র আলী আছগর পিয়ারু সরদারকে চেনেন, তাঁর বাড়িও চেনেন। ব্যবসায়িক কাজে কলেজ ক্যাম্পাসে যখন আসতেন পিয়ারু সরদার, তখন আলী আছগর তাঁর কাছ থেকে অনেক কথা শুনতেন আগ্রহ নিয়ে। এ কথা জেনে মেডিকেল ছাত্র সংসদের ভিপি গোলাম মওলা এবং জিএস শরফুদ্দিন আহমদ খুব খুশি হলেন। ঠিক হলো, আলী আছগর পিয়ারু সরদারের বাড়ি গিয়ে চাবি নিয়ে আসবেন।
২৩ ফেব্রুয়ারি পিয়ারু সরদারের কাছ থেকে চাবি আনার দায়িত্বটা নিয়েছিলেন আলী আছগর। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আহমদ রফিকসহ আরও কয়েকজন ছাত্র। মেডিকেল কলেজের কাছেই হোসেনি দালান এলাকায় ছিল পিয়ারু সরদারের বাড়ি। রেলগেট পার হয়ে মেডিকেলের ছাত্ররা ছুটল সেই বাড়ির উদ্দেশে।
পিয়ারু সরদার বাড়িতেই ছিলেন। আলী আছগর যখন পিয়ারু সরদারকে ছাত্রহত্যা ও শহীদ মিনার নির্মাণের বিষয়ে জানালেন, তখন কোনো প্রশ্ন করলেন না তিনি। একদম বিনা শর্তে চাবিটা তুলে দিলেন আলী আছগরের হাতে। বললেন, ‘যত বস্তা সিমেন্ট লাগে, খরচ করো। তোমাদের যা যা লাগে, তা নিয়ে শহীদ মিনার করো।’
সেই সিমেন্ট দিয়েই তৈরি হয় স্মৃতির মিনার।