এবার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে মুন্সিগঞ্জের রিকাবীবাজার-ইছামতী খালটি। ২০১৮ সাল থেকে শুরু করে কয়েক দফায় খালটি খনন, দখল ও দূষণমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছিল জেলা প্রশাসন। তবে গত পাঁচ বছরে এর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
দেখা যায়, খালটির ওপর কাঁচা-পাকা ৮-৯টি সাঁকো-সেতু রয়েছে। প্রতিটি সাঁকো-সেতুর দুই পাশসহ ১০-১৫টি স্থানে ময়লার বিশাল স্তূপ। সবচেয়ে বেশি স্তূপ দেখা যায় রিকাবীবাজার খালের ওপর জোড়া সেতুর নিচে। ধলেশ্বরী ও ইছামতী নদীর মুখ দুটিও নাব্যতা হারিয়ে শুকিয়ে আছে। খালটিতে ঘাস ও লতা-পাতা জটলা বেঁধেছে। খালের দক্ষিণ পাশে যেসব দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলো পেছনের অংশের খাল ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে। খালের ওপর খুঁটি পুঁতে দখল করে তৈরি করা হয়েছে কাঠ ও আসবাবের দোকান।
মিরকাদিম পৌর খাল রক্ষা কমিটি সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে খালটি দখলমুক্ত ও পুনর্খননের দাবিতে মানববন্ধন, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, খালের প্রান্তে অবস্থান ও প্রতিবাদ সভাসহ বহু কর্মসূচি পালন করা হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক খাল রক্ষায় বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বেশ কয়েকটি স্থাপনা উচ্ছেদও করেছিলেন। জেলা প্রশাসক বদলি হয়ে যাওয়ার পর সে কাজ আর সামনে এগোয়নি। এরপর আবারও খালটি তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।
স্থানীয়রা জানান, খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটার। এটি প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো। ধলেশ্বরী নদীর কাঠপট্টি ঘাট থেকে এই খালের উৎপত্তি। খালটি মিরকাদিম পৌরসভার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ইছামতীর সঙ্গে মিশেছে। এ খাল দিয়ে ‘প্রাচ্যের কলকাতা’ বলে পরিচিত কমলাঘাট নৌবন্দরে বড় নৌকা দিয়ে মালামাল পরিবহন করা হতো, চলত লঞ্চ। এই খালের পানি একসময় স্থানীয়রা পান করতেন, গোসল করতেন।
রিকাবীবাজার পৌর খাল রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব এম এ রিন্টু বলেন, ‘দোকান ও স্থাপনা নির্মাণ করে খালটি দখল করে নিচ্ছেন প্রভাবশালীরা। বাজার ও পৌরসভার সব এলাকার ময়লা-বর্জ্য ফেলে খালটি ভরাট হয়েছে। অনেক আন্দোলন করেছি। প্রভাবশালীদের চোখরাঙানিতে পড়েছি। তার পরও চেয়েছি মৃত খালটি জীবিত হোক। প্রশাসন একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিল। অথচ খাল রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নিল না তারা।’
স্থানীয় চিত্রশিল্পী তাহের মাহমুদ বলেন, ‘স্থানীয় ব্যক্তিমালিকানার জলাশয়গুলো অনেক আগেই ভরাট হয়ে গেছে। প্রাকৃতিক পানির উৎস ছিল এ খাল। এটিও মরে যাচ্ছে। আমরা চাই যেকোনোভাবে খালটির প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হোক।’
ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা গোলজার হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে খালটি তার সম্পূর্ণ নাব্যতা হারিয়েছে। খালটির দুই পাশে মিরকাদিম পৌরসভা, বাজার কমিটি, পঞ্চায়েত কমিটি, মসজিদ কমিটি, কয়েকটি সমিতি ও কয়েকজন ব্যক্তি অন্তত ২০-২৫টি স্থানে ময়লা ফেলছেন ও মাটি ভরাট করে দখলে নিয়েছেন। আমরা তাঁদের তালিকা তৈরি করেছি। যেহেতু এটি ঐতিহ্যবাহী একটি খাল, তাই দখল উচ্ছেদ করে প্রশাসনের মাধ্যমে দ্রুত সীমানা নির্ধারণ করা দরকার।’
খালে পৌরসভার ময়লা ফেলার বিষয়ে জানতে মিরকাদিম পৌরসভার মেয়র আব্দুস সালামের মোবাইলে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ঢাকা বিভাগ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, মুন্সিগঞ্জের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাল খননের ব্যাপারে উদ্যোগ নিচ্ছেন তাঁরা। এর মধ্য রিকাবীবাজার খালটিও রয়েছে। তবে বড় সমস্যা হচ্ছে দুই পাশের দখল, খালের উৎসমুখ ও যে পথ দিয়ে পানি অপসারণ হবে, সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলো অপসারণ না করে মধ্যভাগে খাল খনন করা হলে পানির প্রবাহ আসবে না।
জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খালটির বিষয়ে জানা ছিল না। এ বিষয়ে আগে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না খোঁজ নেব। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে খাল উদ্ধার, সীমানা নির্ধারণ, খননসহ সব ধরনের উদ্যোগ নেব।’