১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ রাত কোনোভাবেই স্বাভাবিক ছিল না। মেজর রফিকুল ইসলাম চট্টগ্রাম শহরের রেলওয়ে পাহাড়ের ওপরে গিয়ে দাঁড়ালেন। তখন রাত নয়টা। সেই পাহাড়ের ওপরে একটি দোতলা কাঠের বাংলো। সেখান থেকে টেলিফোনে পর পর দুটি মেসেজ পাঠিয়েছেন তিনি। দুটি মেসেজই ইপিআর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দক্ষিণে টেকনাফ থেকে উত্তরে শুভপুর পর্যন্ত সব ইপিআর পোস্টে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
মেসেজ দুটো ছিল এ রকম। ১. আমার জন্য কিছু কাঠের ব্যবস্থা করো। ২. আমার জন্য কিছু কাঠ নিয়ে এস।’
গোপন মেসেজ। সাধারণভাবে দেখলে কিছুই বোঝা যাবে না। কিন্তু যাদের উদ্দেশে পাঠানো, তারা অনায়াশেই বুঝে ফেলবে, এ হলো সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহের ডাক।
এ সময় পাহাড়ের নিচ থেকে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে একটা বেবিট্যাক্সি এসে দাঁড়াল। সেটা থেকে নামলেন লে. কর্নেল এম আর চৌধুরী আর মেজর জিয়াউর রহমান।
লে. কর্নেল ফিসফিস করে রফিকুল ইসলামকে বললেন, ‘তোমার এমন করা উচিত নয়।’
‘কেন?’ জানতে চাইলেন মেজর রফিক।
‘ওরা আমাদের বিরুদ্ধে মারাত্মক কোনো ব্যবস্থা নিতে সাহস পাবে না। বিশ্ব জনমতকে উপেক্ষা করে তারা এমন কিছু করতে পারে না।’ বললেন তিনি।
মেজর রফিক বোঝাতে চাইলেন পাকিস্তানি সামরিক সরকার বিশ্ব জনমতের তোয়াক্কা করে না। কিন্তু তারা দুজন বললেন, রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা চলছে, আলোচনায় সাফল্য আসতে পারে। আর এ সময় যদি মেজর রফিক তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকে, তাহলে তা হবে বিদ্রোহ বা বিপ্লব।
তাঁদের বোঝানো গেল না।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেজর রফিক দ্বিতীয় মেসেজটি সাময়িকভাবে বাতিল করলেন। প্রথমটি বহাল রাখলেন।
ভাগ্যের কি পরিহাস, এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই লে. কর্নেল এম আর চৌধুরীকে হত্যা করল ২০ বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা। মেজর জিয়াউর রহমান তখন সোয়াত জাহাজের দিকে যাচ্ছিলেন অস্ত্র উদ্ধার করার জন্য।
সূত্র: রফিকুল ইসলাম, বীর উত্তম, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, পৃষ্ঠা ৪-৮