বইমেলায় বসবে বইয়ের দোকান। থাকবে বইয়ের ক্রেতা আর বিক্রেতা। বিভিন্ন বই, প্রকাশনী আর লেখকের সঙ্গে পরিচিত হবেন দর্শনার্থীরা। প্রচলিত ধারণা এমন হলেও বগুড়ায় দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র।
৯ দিনব্যাপী বইমেলা এখানে পরিণত হয়েছে লোকজ উৎসবে। এখানে বইয়ের দোকানের পাশাপাশি আছে বাহারি পণ্যের দোকান। এর মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক, কসমেটিকস, ক্রোকারিজ পণ্য, খেলনাসামগ্রী এবং মুখরোচক খাবারের দোকান। বই দোকানিরা বলছেন, এসব পণ্যের প্রভাব পড়ছে বইয়ের ওপর। মানুষ মেলায় এসে সেসব বাহারি পণ্য কিনছেন।
বইয়ের দোকানের চেয়ে এসব দোকানেই বেশি ভিড় লক্ষ করা গেছে। আর এসব দোকান বইমেলার সৌন্দর্য নষ্ট করেছে বলে মন্তব্য করেছেন অভিজ্ঞজনেরা।
শহীদ দিবস উপলক্ষে ২০ ফেব্রুয়ারি শহরের শহীদ খোকন পার্ক এলাকায় রাস্তার দুপাশে স্টল বসিয়ে শুরু হয় একুশে বইমেলা। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে এবং জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এ মেলা চলবে আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
আজ বিকেলে মেলার সমাপনী ঘোষণা করবেন দৈনিক করতোয়া পত্রিকার সম্পাদক মোজাম্মেল হক লালু।
আয়োজকেরা জানান, মেলায় মোট ৬০টি স্টল আছে। এর মধ্যে বইয়ের স্টল ৪০টি।
সরেজমিন দেখা যায়, মোট ৩৮টি স্টল সাজানো হয়েছে বইয়ের। এর মধ্যে ৭টি স্টল বন্ধ। খোলা আছে ৩১টি স্টল। তবে আয়োজকদের দাবি বিকেলের দিকে স্টলগুলো খোলা হয়।
আর ২২টি স্টলে দেখা গেছে তৈরি পোশাক, কসমেটিকস, রান্নার সামগ্রী (ক্রোকারিজ), বাচ্চাদের খেলনা এবং খাবারের দোকান।
এর মধ্যে কসমেটিকসের দোকান আছে ৮টি, বাচ্চাদের খেলনার দোকান ৩টি, তৈরি পোশাকের স্টল ৪টি, ক্রোকারিজ পণ্যের স্টল একটি, মাস্কের স্টল একটি এবং ফুচকার তিনটি স্টলসহ মুখরোচক খাবারের দোকান ৫টি।
এ ছাড়া দর্শনার্থীদের বিনা মূল্যে পানি এবং মাস্ক সরবরাহ করার জন্য একটি স্টল রয়েছে, তবে সে স্টলে মাস্ক বা পানি দেখা যায়নি। স্টলটি সম্পূর্ণ খালি ছিল।
বই বিক্রেতা সৌরভ নন্দী এবং রুহুল আমিনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বই কেনায় মানুষের আগ্রহ এমনিতেই কম। তারপর এসব পণ্যের দোকান হওয়ায় গ্রাহকেরা ওইসব দোকানেই বেশি যাচ্ছে। তাই বই বিক্রি কম হচ্ছে।
মেলায় এসেছে স্কুলছাত্রী আতিকা। সে বলে, ‘আমি ভেবেছিলাম বইমেলায় শুধু নানারকমের বই পাওয়া যাবে। কিন্তু এসে দেখলাম এটা অন্যান্য মেলার মতোই হরেকরকমের জিনিসের মেলা।’
সাতশিমুলিয়া হাইস্কুলের শিক্ষক সাইফুন্নাহার বলেন, ‘বইমেলায় দুই-একটা খাবারের দোকান বা বাচ্চাদের খেলনার দোকান থাকতে পারে। কিন্তু অন্য দোকান থাকা সমীচীন নয়। আর এখানে এত বেশি সংখ্যক অন্য দোকান হয়ে গেছে যে “একুশে বইমেলা” নামটা সার্থকতা পাচ্ছে না। মেলাটা দেখলে ছোটদের মনে বইমেলা সম্পর্কে বিভ্রান্তি তৈরি হবে।’
মেলার আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সিদ্দিকী বলেন, ‘৬০টি স্টল নিয়ে মেলার আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু ৪০টি ভাড়া হওয়ার পর ২০টি ফাঁকা পড়ে থাকে। পরে সাতমাথার খুচরা দোকানিদের কাছে ওগুলো ভাড়া দিই। এবার করোনার জন্য বেশি প্রকাশনী আসেনি। তাই বাধ্য হয়ে অন্যদের ভাড়া দিয়েছি।’