রাশিয়ার ইউক্রেন হামলা ছয় মাস পূর্ণ হতে চলেছে। ধারণার চেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হলেও ধীরে ধীরে জয়ের দিকেই এগোচ্ছে মস্কো। ইতিমধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেন যুদ্ধের ঘোষিত একটি লক্ষ্য—লুহানস্ক প্রদেশকে স্বাধীন করা হয়েছে। শান্তি চুক্তি না হলে মাস দুয়েকের মধ্যে পার্শ্ববর্তী দনেৎস্ক প্রদেশও রাশিয়া ও রাশিয়া সমর্থিত স্থানীয় সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে। অর্থাৎ শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এই যুদ্ধে রাশিয়া সম্ভবত হারছে না।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে আলোচনা করার কোনো অর্থ নেই। কারণ, রুশ সামরিক সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি, বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো বেশি। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া যে হারবে না, এটা তার কারণ নয়।
রাশিয়ার বিশিষ্ট রাজনীতিবিজ্ঞানী ও দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পরামর্শদাতা সের্গেই কারাগানভের বরাতে টাইমসের বিশ্লেষণে বলা হয়, ইউক্রেন পশ্চিমাদের, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের বলয়ে চলে যাওয়া রাশিয়ার ‘অস্তিত্বের জন্য হুমকি’। এ কথা প্রায় দুই দশক বা তার বেশি সময় ধরে বলে আসছে মস্কো।
কিন্তু রাশিয়ার এই ন্যায্য উদ্বেগকে আমলে না নিয়ে ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনকে পূর্ণ মাত্রায় সামরিক ও অন্য সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো। এ অবস্থায় ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করার মতো কোনো সিদ্ধান্ত আসার আগেই দেশটিতে হামলা করার কোনো বিকল্প ছিল না পুতিনের কাছে।
স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ মূলত রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনকে ইতিমধ্যে প্রায় ৬০০ কোটি ডলারের সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যার সিংহভাগ সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি জার্মানি, সুইডেনসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশও অত্যাধুনিক অস্ত্র পাঠাচ্ছে ইউক্রেনে। কূটনৈতিক ও গোয়েন্দা সহায়তা দিচ্ছে।
সের্গেই কারাগানভ বলেন, ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক অন্য প্রতিবেশী চীন বা ফিনল্যান্ডের চেয়ে ভিন্ন। ইউক্রেনের ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদির সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক শত শত বছরের পুরোনো। দেশটির প্রতি পাঁচজনের একজন রুশ ভাষায় কথা বলে। ইউক্রেনের পূর্বদিক দনবাসে এ সংখ্যা আরও বেশি। ১৯৯১ সালে বিলুপ্তি ঘোষণার আগে দেশটি সোভিয়েত রাশিয়াভুক্ত ছিল। দেশটির বর্তমান সামরিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ইত্যাদি অবকাঠামোর অধিকাংশই সেই সময়ে তৈরি।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক—রাশিয়া অন্যতম বিশ্বশক্তি। বিশ্বে সে তার মতো প্রভাববলয় তৈরি করতে চায়। এ যুদ্ধে হারলে রাশিয়ার ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। তাই রাশিয়া কোনোভাবে হার মেনে নেবে না। এটা পশ্চিমাদের বুঝতে হবে।