কুমিল্লার ৩ উপজেলার ২৫ ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) পঞ্চম ধাপের নির্বাচন আগামীকাল। এর মধ্যে চান্দিনা উপজেলার ১২ ইউপিতে নৌকার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। এ ছাড়া বিএনপি, এলডিপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। ফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিদ্রোহীদের পাশাপাশি অন্যান্য দলের প্রার্থীদের সঙ্গেও লড়তে হচ্ছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রচারে বাধা ও নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চান্দিনা উপজেলার ১২ ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছে ২৯ জন। সবাই স্থানীয় সাংসদ প্রাণ গোপালের অনুসারী বলে জানা গেছে। এদিকে দোল্লাই নবাবপুর ইউপিতে সাবেক চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানের পক্ষে কাজ করছে আওয়ামী লীগের একটি অংশ।
সাংসদ আলী আশরাফের মৃত্যুর পর শূন্য হওয়া আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন লড়াইয়ে নামেন তাঁর ছেলে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্তাকিম আশরাফ টিটু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। মনোনয়ন লড়াইয়ে ডা. প্রাণ গোপাল বিজয়ী হয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হন। প্রাণ গোপাল সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পরই চান্দিনার চিত্র পাল্টাতে থাকে। সক্রিয় হয়ে ওঠেন তাঁর অনুসারীরা। তাঁরা সব পর্যায়ে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালান।
অপর দিকে মুন্তাকিম আশরাফ টিটুও ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন লড়াইয়ে ১০টি ইউপিতে নৌকা পাইয়ে দিয়েছেন নিজের নেতা-কর্মীদের। বাকি দুটিতে মনোনয়ন পেয়েছেন সাংসদ ডা. প্রাণ গোপাল সমর্থিত নেতা-কর্মীরা। ফলে প্রায় সবগুলো ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাংসদ ডা. প্রাণ গোপাল সমর্থিত নেতা-কর্মীরা।
এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ৬ ডিসেম্বর সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে রাজধানী ঢাকার গ্রিন লাইফ হাসপাতালে যান। তখন তিনি তাঁদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন বলে জানা গেছে। ৯ ডিসেম্বর রাতে চান্দিনা ফার্মল্যান্ড অ্যান্ড কোল্ডস্টোরেজ লিমিটেডে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান কেরণখাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশিদ।
এরপরই সাংসদ ডা. প্রাণ গোপাল আর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্তাকিম আশরাফ টিটুর গ্রুপের মধ্যে কোন্দল আরও প্রকাশ্যে রূপ নেয়। টিটুর প্রার্থীদের বিপরীতে সাংসদ প্রাণ গোপালের ১০ জন নেতা-কর্মী বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ান।
এদিকে গত রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে প্রয়াত সাংসদ অধ্যাপক আলী আশরাফের ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্তাকিম আশরাফ টিটু বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এ প্রার্থীদের ফেল করানোর জন্য স্থানীয় সাংসদ ডা. প্রাণ গোপালের নির্দেশে নৌকার নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ প্রশাসন। সাংসদ প্রাণ গোপাল তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যেসব প্রার্থীর ডিউ লেটার দিয়েছিলেন, তাঁরাই এখন বিভিন্ন ইউপিতে নৌকার বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ আলম বলেন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে নৌকার ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে বিএনপি-জামায়াত, এলডিপি সুবিধা নিতে পারে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ ডা. প্রাণ গোপালকে কয়েকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।