হোম > ছাপা সংস্করণ

সরকারবাড়ি-কর্তাবাড়ির দ্বন্দ্ব ৫২ বছরেও থামেনি

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার একটি গ্রাম মৌটুপি। গ্রামটিতে সরকারবাড়ি ও কর্তাবাড়ি—এই দুই বংশের আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। ৫২ বছর ধরে চলা কর্তৃত্বের দ্বন্দ্বে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, হামলা, মামলা ও খুন নিত্যঘটনায় পরিণত হয়েছে। এতে এ পর্যন্ত উভয় পক্ষের ১৪ জন খুন হন। সর্বশেষ গত জুন মাসেও একজন প্রাণ হারান। তাঁদের থামাতে গ্রামটিতে একবার পুলিশের অস্থায়ী ফাঁড়ি পর্যন্ত বসানো হয়।

জানা গেছে, বংশ দুটির একটির নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা, অন্যটিতে আওয়ামী লীগের নেতারা। বহুবার উভয় বংশের মধ্যে মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনো কাজে আসেনি।

১৯৭২ সাল থেকে শুরু হয় ওই গ্রামের সরকারবাড়ি ও কর্তাবাড়ির দ্বন্দ্ব। ১৯৭৪ সালে কফিল উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি এই দ্বন্দ্বে প্রথম খুন হন।

বর্তমানে সরকারবাড়ি বংশের নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাদেকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সাফায়েত উল্লাহ এবং কর্তাবাড়ির নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হক।

গ্রামের বাসিন্দা ও দুই পক্ষের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ঈদুল আজহার আগের দিন ফুটবল খেলা নিয়ে সংঘর্ষে আহত কর্তাবাড়ির নাদিম চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৯ জুন মারা যান। এ ঘটনায় সরকারি বাড়ির লোকজনকে আসামি করে মামলা করা হয়। এ মামলায় ১২ আগস্ট সরকারবাড়ির ৬৯ জন জামিনে মুক্ত হন। ১৩ আগস্ট দুই পক্ষের মধ্যে আবারও দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনী এলাকায় গিয়ে দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে। বিরোধ মেটাতে ১৫ সেপ্টেম্বর সালিসের দিন নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কর্তাবাড়ির লোকজন ঘোষণা দেন, সালিসের আগে সরকারবাড়ির অন্তত একজনের লাশ চান। এ অবস্থায় সালিসের আগে ১৩ সেপ্টেম্বর জুমার নামাজের পর কর্তাবাড়ির লোকজন দা-বল্লম নিয়ে সরকারবাড়িতে হামলা চালান বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিন দুই পক্ষের মধ্যে দুই ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলে। এ সংঘর্ষের একপর্যায়ে সরকারবাড়ির ইকবাল নামের এক ব্যক্তি বুকে বল্লমবিদ্ধ হয়ে নিহত হন বলে দাবি সরকারবাড়ির লোকজনের।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে দুই পক্ষের মধ্যে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় এখনো মামলা আছে ডজনখানেক এবং আসামি প্রায় ৫০০ জন। এসব মামলা আদালতে চলমান বলেও জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, কর্তাবাড়ি ও সরকারবাড়ি পাশাপাশি। দুই বংশের দ্বন্দ্বে গ্রামের লোকজন দুই ভাগ হয়ে গেছে। কেউ মীমাংসা করার উদ্যোগ নিলেও পরে যেকোনো এক বংশের পক্ষে চলে যান। গত ঈদুল আজহার পর গ্রামে পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্পও বসানো হয়েছিল।

কর্তাবাড়ির নেতা তোফাজ্জল হক বলেন, ‘আমার চাচাতো দাদা ওয়াছিরুদ্দিন আহমেদ ৩০ বছরের বেশি সময় চেয়ারম্যান ছিলেন। স্বাধীনতার পর ওয়াছিরুদ্দিন আহমেদ ও সরকারবাড়ির হাজী আবদুল নূরের মধ্যে ভিলেজ পলিটিকসের (গ্রাম্য রাজনীতি) কারণে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আমাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নির্বাচনকেন্দ্রিক এবং রাজনৈতিক।’

বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান সরকারবাড়ির নেতা সাফায়েত উল্লাহ বলেন, ‘স্বাধীনতার পর কী নিয়ে শত্রুতা হয়েছিল, তা আমি বলতে পারি না। কারণ এটা অনেক আগের কথা। তবে আমাদের মধ্যে শত্রুতার সৃষ্টি হয়েছে গত উপজেলা নির্বাচনে কেন্দ্র নিয়ে। তাঁরা কেন্দ্র থেকে জোর করে ব্যালট পেপার নিয়ে গিয়েছিল।’

আপনারা কি কখনো এ শত্রুতার অবসান চেয়ে মীমাংসার চেষ্টা করেননি? এমন প্রশ্নের জবাবে একই কথা বলেন তোফাজ্জল হক ও সাফায়েত উল্লাহ। তাঁরা বলেন, অনেক চেষ্টা করেও এর কোনো সুরাহা হয়নি।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, ‘দুই বংশের মধ্যে শত্রুতার বিষয়টি আমরা জেনেছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।’

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ