বন্ধুর মারফত যে পাস পাওয়া যেত, সেটা নিয়েই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও দীপক মজুমদার দুই বন্ধু বেরিয়ে পড়তেন ট্রেনে করে। বন্ধুদের একজন ছিলেন প্রশান্ত দাশগুপ্ত। তাঁর বাবা ছিলেন রেলের কর্মকর্তা। রেলের এই কর্মকর্তারা পরিবারের জন্য দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকোনো প্রান্ত পর্যন্ত ভ্রমণের পাস পেতেন। সেই পাস পেয়ে কত জায়গায় যে গিয়েছেন সুনীল আর দীপক।
প্রশান্তর কাছে অবশ্য যথেষ্ট কাকুতি-মিনতি করতে হয়েছিল। এরপর প্রশান্ত আর তাঁর ছোট ভাইয়ের নামে বরাদ্দ পাস হয়ে উঠেছিল দুই বন্ধুর আনন্দের উৎস।
দুজন মিলে টাকা তিরিশেক জোগাড় করতে পারলেই বেরিয়ে পড়তেন পথে। একবার হলো কী, দীপকের মানিব্যাগটা কোথায় গিয়ে পড়ল কে জানে! সেই মানিব্যাগেই ছিল দীপকের টাকা-পয়সা। সুনীল কখনোই মানিব্যাগের ধার ধারতেন না। তার পকেটে ছিল ১১ টাকা আট আনা। কিন্তু যে কালীবাড়িতে উঠেছিলেন, সেখানে তিন দিনের বিছানা ভাড়া দিতে হবে অন্তত ১২ টাকা। ভাড়া দিলে কীভাবে তারা টাকা-পয়সা ছাড়া দিল্লি হয়ে তিন দিনে কলকাতায় পৌঁছাবেন? ভাবতে গিয়ে তাদের মাথা গরম হয়ে গেল। কারণ তিন দিন না খেয়ে পুরো পথ পাড়ি দেওয়া কঠিন ব্যাপার।
তখন তাঁরা এক যুক্তি করলেন। যখন কালীবাড়ির ম্যানেজার-কর্মচারীরা বিশ্রাম নিচ্ছেন, তখন ব্যাগ দুটি হাতে নিয়ে নিঃশব্দে পলায়ন করলেন তারা। ছুট দিলেন রেলস্টেশনের দিকে। শুধু কি তাই? ভয়ে লুকিয়ে রইলেন একগাদা বস্তার আড়ালে। ট্রেন আসতে তখনো দেড় ঘণ্টা বাকি। এর মধ্যে যদি কালীবাড়ির লোকজন এসে হাজির হয় পুলিশ নিয়ে! সুনীল দিব্য চোখে দেখতে পেলেন, পুলিশ এসে তাদের পেটাচ্ছে এবং দীপকের চশমা ভেঙে পড়ে আছে রাস্তায়।
কিন্তু সেরকম অঘটন ঘটল না। সেই ১২ টাকা শোধ না করেই তারা ফিরে এলেন। এরপর দীর্ঘকাল সুনীল সেই বারো টাকা ফাঁকি দেওয়ার জন্য অনুশোচনা করেছেন।
সূত্র: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, অর্ধেক জীবন, পৃষ্ঠা ১২০-১২৪