বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ আলমগীর কবির। সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে শিল্প ও নান্দনিকতার পাশাপাশি বাণিজ্যিক আকাঙ্ক্ষাও তাঁর মধ্যে প্রবল ছিল। তাই হলে গিয়ে যেন দর্শক সিনেমা দেখেন, সে ব্যাপারে তিনি সচেতন ছিলেন।
আলমগীর কবিরের জন্ম ১৯৩৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর, রাঙামাটি শহরে। তবে তাঁদের আদি বাড়ি বরিশাল জেলার বানারীপাড়ায়। পিতার চাকরিসূত্রে কলকাতার হুগলিতে শৈশবের অনেকটা সময় কেটেছে তাঁর। দেশভাগের পর ঢাকায় ফিরে আসেন।
১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় অনার্স পাস করেন। পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগেই লন্ডনে গিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাপ্লায়েড ম্যাথমেটিকসে বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। সেখানে থাকাকালে তিনি ইংল্যান্ডের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন এবং পার্টির মুখপত্র ‘ডেইলি ওয়ার্কার’-এ সাংবাদিকতা শুরু করেন।
১৯৬৬ সালে দেশে ফিরে বামপন্থী আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তান সরকার। জেল থেকে মুক্ত হয়ে তিনি প্রথমে দ্য অবজারভার, পরে সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকার সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। পরে সাপ্তাহিক ট্যাবলয়েড ‘এক্সপ্রেস’ পত্রিকায় জহির রায়হানের সঙ্গে সম্পাদক নিযুক্ত হন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ইংরেজি বিভাগের প্রধান হয়ে কাজ করেন। ‘আহমেদ চৌধুরী’ ছদ্মনামে তিনি ইংরেজি খবর ও কথিকা পাঠ করতেন।
তরুণসমাজকে উদ্বুদ্ধ করে এ দেশে শক্তিশালী চলচ্চিত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে তাঁর অসাধারণ ভূমিকা ছিল। সেই সূত্রে তিনি পাকিস্তানের একমাত্র চলচ্চিত্র সংগঠন ‘পাকিস্তান চলচ্চিত্র সংস্থা’র সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। মতানৈক্যের কারণে তিনি এই সংগঠন থেকে বের হয়ে গঠন করেন ‘ঢাকা সিনে ক্লাব’।
প্রামাণ্যচিত্র দিয়ে পরিচালনা শুরু করলেও স্বাধীনতার পরে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করা শুরু করেন। তাঁর পরিচালিত তিনটি চলচ্চিত্র ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘সীমানা পেরিয়ে’ ও ‘রূপালী সৈকতে’ ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের ‘বাংলাদেশের সেরা ১০ চলচ্চিত্র’র তালিকায় স্থান পেয়েছে।
একজন আধুনিক, সাহসী ও রাজনীতিসচেতন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আমাদের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে আলমগীর কবিরের নাম।