জামালপুরে লিচুবাগানে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। পোকার আক্রমণের আগে শিলাবৃষ্টিতে লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তা ছাড়া গরমে ফলনও হয়েছে কম। যে কারণে আগাম বাগান কিনে বিপাকে পড়ছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
লিচুচাষিরা বলছেন, এ বছর প্রচণ্ড রৌদ্র আর শিলাবৃষ্টির কারণে লিচুর ফুল ও মুকুল নষ্ট হয়েছে। বাকি যা ছিল পোকার আক্রমণে তা-ও ঠেকানো যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে এ বছর লিচুবাগানের মালিক এবং মৌসুমি লিচু ব্যবসায়ীদের লোকসানে পড়তে হয়েছে। তবে কৃষি অফিস থেকে বলা হয়েছে, লিচুচাষিরা যেন লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারেন, সে জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, জামালপুর জেলার ৭টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লিচুর চাষ হয় সদর উপজেলায়। এর মধ্যে শরিফপুর, শ্রীরামপুর, রানাগাছা, শাহাবাজপুর এলাকায় লিচুর বাগান বেশি। এ অঞ্চলের লিচুর চাহিদা বেশি থাকায় চায়না থ্রি, এলাচি, বোম্বাই এবং মুজাফরি জাতের লিচুর চাষ করেন চাষিরা। কয়েক বছর ধরে লিচুর বাগান করে চাষিরা লাভবান হওয়ায় লিচু চাষে আগ্রহ বাড়ছে তাঁদের। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এ বছর ৮০ ভাগ লিচুই নষ্ট হয়ে ঝরে গেছে। এ ছাড়া বাগানে কিছু লিচু থাকলেও পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। এ বছর খরচের টাকাও উঠবে না বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
শ্রীরামপুর গ্রামের লিচুবাগানের মালিক ইদ্রিস মিয়া বলেন, ‘আমার বাগানে এ বছর প্রথম দিকে মুকুল ভালোই ছিল। বৃষ্টির কারণে মুকুল ঝরে পড়েছে। তার পরেও আশা ছিল কিছু টাকা উঠবে। তা-ও হলো না। এ বছর শিলাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড দাবদাহে লিচুর ফলন হয়নি। যা অবশিষ্ট ছিল বেশির ভাগ পোকার আক্রমণে নষ্ট হয়েছে। গত বছর দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছিলাম। এ বছর ২০ হাজার টাকার লিচুও বিক্রি হয়নি। কৃষি অফিসের লোকজন এসেও পোকার আক্রমণ ঠেকাতে পারেনি। এ বছর সবার ক্ষতি হয়েছে। এ অঞ্চলের লিচুর চাহিদা অনেক বেশি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারেরা এসে বাগান কিনে নেন। কিন্তু এ বছর লিচুর পাইকারেরাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। জামালপুরের লিচু কীটনাশক ও বিষমুক্ত হওয়ায় রাজধানী ঢাকা, ময়মনসিংহ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে লিচু ব্যবসায়ীরা এসে বাগান কিনে নেন। এ ছাড়া স্থানীয় বাজারে মৌসুমি ফল লিচুর চাহিদা অনেক বেশি। কিন্তু এ বছর বাজারে লিচু পাওয়া যাচ্ছে না।’
জামালপুর সদর উপজেলার রানাগাছার কালিন গ্রামের লিচুচাষি আব্দুল মোতালব বলেন, ‘এ বছর লিচুর বাগানে পোকার আক্রমণ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। কীটনাশক দিয়েও পোকার হাত থেকে বাগান রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। পোকার আক্রমণে লিচু ঝরে পড়েছে, পচে গেছে।
মৌসুমি ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম বলেন, ‘এ বছর সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়ে শ্রীরামপুরে তিনটি বাগান কিনেছিলাম। প্রতিটি বাগানে লোকসান গুনতে হচ্ছে। কর্মচারীদের বেতন দিয়ে আসল টাকাই এ বছর উঠবে না।’
লিচু কিনতে আসা মোবারক হোসেন বলেন, ‘এবার লিচুর দাম অনেক বেশি। বাচ্চারা লিচু খেতে পছন্দ করে, তাই কিনতে হয়। ১০০ লিচু ৬০০ টাকায় কিনলাম।’
জামালপুরের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এ বছর জেলার বাইরে থেকে আনা লিচু বিক্রি হচ্ছে। চায়না থ্রি জাতের ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়।
জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ জাকিয়া সুলতানা বলেন, এ বছর সদর উপজেলায় ২০০টি লিচুর বাগান করা হয়েছে। এ অঞ্চলের কৃষকেরা লিচুর বাগান করে বেশি লাভবান হওয়ায় দিন দিন লিচুচাষির সংখ্যা বাড়ছে। তবে এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাগানের মালিকেরা কিছুটা ক্ষতিতে পড়েছেন। ঝড়, শিলাবৃষ্টি আর প্রচণ্ড দাবদাহে লিচুর মুকুল যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি লিচু বড় হওয়ার পর প্রচণ্ড রৌদ্রে লিচু ঝরেও গেছে। এ ছাড়া পোকার আক্রমণও ছিল। তবে সদর উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে লিচুচাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, যাতে কিছুটা লোকসান পুষিয়ে তোলা যায়।