চোখেমুখে স্পষ্ট ক্লান্তির ছাপ। ট্রাকের স্টিয়ারিংয়ে মাথা রেখে রাতে খানিক পরপর একটু-আধটু ঘুমিয়েছিলেন। সেই ঘুমে কাজের কাজ কিছু তো হয়নি, উল্টো চোখ লাল হয়ে গেছে চালক সোলায়মানের। মালবোঝাই কাভার্ড ভ্যান নিয়ে সোলায়মানের গন্তব্য চট্টগ্রাম। অথচ একটি ফেরির দেখা পেতে প্রায় ২২ ঘণ্টা ধরে কচ্ছপগতিতে এগোচ্ছেন বলে জানালেন।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে গতকাল সোমবার দুপুরে তীব্র যানজটের মধ্যে ট্রাকচালক সোলায়মানের মতো এমন অনেককেই ফেরি পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা যায়। অপেক্ষারত ছিলেন দূরপাল্লার বাস, প্রাইভেট কার, অ্যাম্বুলেন্সসহ নানা যানবাহনের যাত্রী, চালক ও রোগীরা। ঘাটের স্বল্পতা, ঘাট এলাকায় ড্রেজিংয়ের কাজ, বৈরী আবহাওয়া ও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপেই এমন ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে বলে সরেজমিনে জানা গেছে।
আজকের পত্রিকাকে চালক সোলায়মান জানান, গত রোববার বিকেল ৪টায় দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দ মোড়ে এসে সিরিয়ালে আটকা পড়েন তিনি। সেখান থেকে গতকাল সোমবার ভোরে ঘাটের দিকে এসে বেলা দেড়টা বাজলেও তিনি ঘাট থেকে ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিলেন।
বেলা ১টার দিকে ট্রাকচালক সোলায়মান বলেন, ‘এখনো ফেরি পেতে চার-পাঁচ ঘণ্টা লেগে যাবে আমার। লম্বা সময় ড্রাইভ করছি। রাতে যানজটে পড়ে কিছু সময় ঘুমিয়েছি। কিন্তু শরীর তো আর চলে না।’
সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, সকালে ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ৪ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত সারি সারি যানবাহন। তবে এর মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যাই বেশি।
বরিশাল থেকে সাকুরা পরিবহনে আসা আশরাফুল আলম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘মাঝেমধ্যেই ঢাকায় যেতে এই রাস্তা ব্যবহার করি। আগে বাসের লাইনে কোনো ট্রাক দেখতাম না। কিন্তু আজ (সোমবার) দেখি আগে আগে ফেরি পেতে বাসের লাইনে অনেক ট্রাকও ঢুকে গেছে।’
ফেরিঘাট সড়কের পুলিশ বক্সের সামনে পূর্বাশা পরিবহনের চালক জিয়া ইসলাম বলেন, ‘কিছুদিন আগেও এই অবস্থা ছিল না। যাত্রীদের সমস্যা সমাধানে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে প্রতিদিনই এভাবে কর্মঘণ্টা নষ্ট হবে।’
গোল্ডেন লাইনের দৌলতদিয়া ঘাট তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালাম জানান, আগে বাস ও ট্রাকের আলাদা সিরিয়াল থাকত। কিন্তু যানজটের ভোগান্তির কারণে এখন আগে আগে যেতে নিয়ম মানছেন না চালকেরা।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘দৌলতদিয়ার সাতটি ঘাটের মধ্যে পাঁচটি চালু রয়েছে। ১ ও ২ নম্বর ঘাট দুই বছর আগে নদীভাঙনের কবলে পড়ায় এখনো চালু করা যায়নি। তা ছাড়া ৭ নম্বর ঘাটের কাছে ড্রেজিংয়ের কাজ চালাতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ। আশা করছি আগামী সপ্তাহে ভোগান্তি কিছুটা কমবে।’