মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে ইটভাটার গাড়িগুলো থেকে মাটি পড়ে সড়ক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। উপজেলার লতব্দী ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা থেকে রামকৃষ্ণদী-কুচিয়ামোড়া কলেজ পর্যন্ত প্রধান সড়ক ব্যবহার করে ডাম্প ট্রাক ও মাহিন্দ্রায় মাটি বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক সময় ঝাঁকুনিতে কিছু মাটি সড়কে পড়ে। যানবাহনের চাপায় মাটি সড়কে লেপ্টে যায়। বৃষ্টিতে সড়কে কাদার সৃষ্টি হয়ে পিচ্ছিল হয়। এতে অহরহ ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার গোডাউন বাজার মোড় থেকে কুচিয়ামোড়া কলেজ এলাকা পর্যন্ত পিচঢালা রাস্তাটি মাটি পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। লতব্দী ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার খিদিরপুর গ্রাম থেকে গোডাউন বাজার মোড়সংলগ্ন এলাকা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। পিচঢালা রাস্তাটির ওপর মাটি ও কাদার আস্তরণে বোঝাই যায় না—রাস্তা পাকা না কাঁচা। রাস্তাটি পুরো কাদায় পিচ্ছিল হয়ে রয়েছে। পিচ্ছিল আস্তরণে প্রায়ই নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে যানবাহন। ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এর থেকে মুক্তি চান চালক ও পথচারীরা।
জানা যায়, এ উপজেলায় ৬২টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটা সারা বছর মাটি কেনে। এতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষিজমির ওপরের মাটি (টপ সয়েল) কেটে নেয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেশিন (ভেকু) দিয়ে মাটি কাটা হয়। সেই মাটি ট্রাক ও মাহিন্দ্রায় করে ভাটায় নিয়ে যান চালকেরা। মাটি বহনের সময় গাড়ির মাটি রাস্তায় পড়ে। এই বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে পাকা রাস্তাগুলো পিচ্ছিল হয়ে মরণফাঁদে পরিণত হয়।
মোটরসাইকেলচালক মো. আমিন শেখ বলেন, ‘এই সড়ক এতটাই পিচ্ছিল যে মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে না। যেকোনো মুহূর্তে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই রাস্তা পরিষ্কার করার দাবি জানাচ্ছি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন গ্রামবাসী বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাহিন্দ্রার কারণে সড়কে ধুলা থাকে। আর বৃষ্টিতে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে থাকে। পায়ে হেঁটে যাওয়াও কঠিন হয়।’
কয়েকজন পথচারী অভিযোগ করে বলেন, উপজেলার বিভিন্ন কৃষিজমির মাটি কেটে ভাটায় বিক্রি চলছে। সেই মাটি বহনের সময় জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় মাটি পড়লেও খেসারত দিতে হচ্ছে পথচারীদের। অনেকেই সাইকেল ও মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
লতব্দী ইউপির চেয়ারম্যান হাফেজ মো. ফজলুল হক বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে এখন চলাচল করা যায় না। কারণ, সারা বছরই ইটভাটার মাটি বহনকারী মাহিন্দ্রা-ট্রাক চলাচল করে থাকে। এসব গাড়ি চলাচলের সময় ঝাঁকুনিতে গাড়ি থেকে মাটির নিচে পড়ে রাস্তায় একাকার হয়ে যায়। এতে শুকনো মৌসুমে ধুলায় চলাচল করা যায় না। আর বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি পড়ে পিচ্ছিল হয়ে যায়। অনেক সময় ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তাই প্রশাসনের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছি।’
উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘ওই এলাকাগুলোতে অনেকগুলো ইটভাটা রয়েছে। সেই ভাটার জন্য মাটি বহন করা গাড়ি চলাচল করে এবং গাড়ি চলার সময় মাটি নিচে পড়ে রাস্তার অবস্থা খারাপ হচ্ছে, এটা মোটেও ঠিক না। আমি বিষয়টি ইউএনওর সঙ্গে আলাপ করেছি এবং চেয়ারম্যানদের জানিয়েছি। তাঁরা এই বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে দেখে ব্যবস্থা নেবেন।’